নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিতে যুবদল কর্মী শাওন প্রধান নিহতের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে শাওনের বড় ভাই মিলন প্রধান বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এ মামলা করেন। মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শাওন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের ছোড়া ইট ও আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে গুরুতর জখম হয়ে শাওন মারা যান। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু প্রথম আলোকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল রাত সোয়া একটার দিকে কড়া পুলিশি পাহারায় নবীনগর কবরস্থানে শাওনের লাশ দাফন করা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশের উপস্থিতিতে নিহত শাওনের বড় ভাই মিলন প্রধান ও মামা মোতাহার হোসেনের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে পুলিশ ও জেলা ডিবি পুলিশের পাহারায় শাওনের লাশ বাড়িতে নেওয়া হয়। লাশ হস্তান্তরের পৌনে এক ঘণ্টার মধ্যে তড়িঘড়ি করে শাওনের লাশ দাফন করা হয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, শাওন নবীনগর এলাকার একটি ওয়ার্কশপে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। গতকাল সকালে শাওন ওয়ার্কসশপের মালামাল কেনার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে শহরের উদ্দেশে রওনা দেন। বেলা একটার দিকে শাওনের ভাই মিলন মুঠোফোনে খবর পান, শাওনের লাশ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে। পরে মিলন হাসপাতাল গিয়ে তাঁর ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে মিলন মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৫ হাজারের বেশি নেতা–কর্মী ইটপাটকেল ও লোহার রড, হকিস্টিকসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় মিছিল করে এবং পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। শাওন দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় পাকা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা ইটপাটকেল ছোড়েন, ককটেল বিস্ফোরণ করে ও অবৈধ অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে থাকলে ওই ইটপাটকেল ও অবৈধ অস্ত্রের গুলিতে শাওন মাথায় ও বুকে গুরুতর জখম হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পরে রাস্তায় থাকা লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা শাওনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে আজ শুক্রবার সকালে মামলার বাদী মিলনের কাছে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, তাঁর ভাইকে যাঁরা হত্যা করেছেন, তিনি তাঁদের বিচার চান।
প্রসঙ্গত, গতকাল নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শাওনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া পথচারী-নারীসহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও ২৬ জন। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটায় পুলিশ, সাংবাদিক, পথচারীসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় দেড় ঘণ্টা পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহত শাওন প্রধান ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের পূর্ব গোপালনগর এলাকার সাহেব আলীর সন্তান। বাড়ির পাশের একরি ইজিবাইক তৈরির কারখানায় তিনি ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সংঘর্ষের ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে শাওনকে দেখা গেছে। সংঘর্ষের আগে একটি মিছিলের সামনের সারিতে তাঁর অবস্থান ছিল। সংঘর্ষের সময় নগরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় তাঁকে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা গেছে।
শাওন নিহত হওয়ার ঘটনার পর থেকে বিএনপি তাঁকে যুবদল কর্মী হিসেবে দাবি করে আসছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাওন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তিনি যুবদলের কমিটিতে পদ পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ ছাড়া শাওনের ফেসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনি নিজেকে যুবদল কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন।
অন্যদিকে গতকাল সন্ধ্যায় শাওন প্রধানকে যুবলীগ কর্মী দাবি করে মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় নবীনগর এলাকায় নিহত শাওনের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা মিছিলে অংশ নেন।