নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় দুই কিশোর গ্যাংয়ের দ্বন্দ্বের জেরে কিশোর গ্যাংয়ের নেতা মারুফ হোসেনকে কুপিয়ে হত্যার ৪২ ঘণ্টা পর মামলা হয়েছে। মামলায় অপর কিশোর গ্যাংয়ের ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৩১ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ভোরে শিবপুর থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন নিহত ব্যক্তির বড় বোন বৃষ্টি আক্তার। এরই মধ্যে এজাহারভুক্ত তিনজনসহ চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সৈকত গ্রুপ নামে স্থানীয় একটি কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান শওকত আলী ওরফে সৈকতকে (২৫)। তিনি ঘটনার পর থেকে এলাকাছাড়া। গ্রেপ্তার চারজন হলেন সৈকত গ্রুপের সদস্য মো. আবদুল্লাহ (২৩), বশির সরকার (২২), রিপন মিয়া (২৩) ও মো. আরিফ (২১)। তাঁদের মধ্যে আবদুল্লাহ, বশির ও রিপন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। এ ছাড়া আরিফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে। গতকাল রাতে শিবপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিবপুর থানাসংলগ্ন সদর রোডের একটি তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় মারুফ হোসেনকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মারুফ হোসেন উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের সৈয়দনগর এলাকার প্রয়াত মো. মোশাররফ হোসেনের ছেলে। শিবপুর শহরে বাবার চাকরি সূত্রে প্রাপ্ত কোয়ার্টারে মাকে নিয়ে বসবাস করে স্থানীয় বাজারে কাঁচামালের ব্যবসা করতেন মারুফ।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবপুরে একাধিক কিশোর গ্যাং সক্রিয় আছে। এর মধ্যে মারুফ গ্রুপের প্রধান ছিলেন মারুফ হোসেন (২০) ও সৈকত গ্রুপের প্রধান শওকত আলী সৈকত (২৫)। মাস দুয়েক আগে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে শওকত আলীকে উপর্যুপরি কুপিয়ে আহত করেছিল মারুফ গ্রুপ। শওকত বেঁচে ফেরেন, মারুফও মাকে নিয়ে এলাকা ছাড়েন। ওই ঘটনায় করা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি ছিলেন মারুফ।
পুলিশ বলছে, সৈকতকে উপর্যুপরি কুপিয়ে আহত ব্যক্তির মামলায় আসামি মারুফ পরিবারের সদস্যসহ পালিয়ে ছিলেন। গত রোববার মারুফ এলাকায় ফিরলে বেলা ১১টার দিকে সৈকতের নেতৃত্বে মারুফকে ধাওয়া দেওয়া হয়। এ সময় দৌড়ে সদর রোডের একটি তিনতলা বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়েন মারুফ। পিছু পিছু সৈকত গ্রুপও ওই বাড়িতে যায়। বাড়িটির দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে মারুফ ঢুকলে সেখানে তাঁকে উপর্যুপরি কোপায় তারা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানান চিকিৎসকেরা।
মামলার বাদী ও নিহত ব্যক্তির বড় বোন বৃষ্টি আক্তার বলেন, বাবার মৃত্যুর পর মারুফই ছিল এই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সবজি বিক্রি করে সংসার চালাতেন তিনি। তাঁকে যারা কুপিয়ে মেরেছে, তাদের ফাঁসি দাবি করেন তিনি।
শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন বলেন, দুই কিশোর গ্যাংয়ের দ্বন্দ্ব ও পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিশোধ নিতে মারুফকে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় অপর কিশোর গ্যাংয়ের ২৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৭-৮ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার চারজনকে আদালতে পাঠানো হচ্ছে।