১৫ বছর আগে হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মো. আবু জাহির ও তাঁর স্ত্রীর মোট ৩১ ভরি সোনা ছিল। টানা তিন মেয়াদের এই সংসদ সদস্যের পরিবারের সোনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩৯ ভরিতে। এর মধ্যে ১০৮ ভরিই তাঁর ছেলে ইফাত জামিলের। একই সময়ে স্ত্রী ও ছেলের আয় বেড়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। এ ছাড়া পাঁচ বছরে দেড় কোটি টাকা দামের নতুন ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন আবু জাহির।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাহিরের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। আবু জাহির চতুর্থ দফায় এবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। টানা তিনবারের এই সংসদ সদস্য বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় জাহিরের বার্ষিক আয় ছিল ৩৭ লাখ ৭ হাজার ৯২৬ টাকা। গত ৫ বছরে তাঁর আয় তেমন না বাড়লেও তাঁর স্ত্রীর ৫৫ লাখ এবং ছেলের সাড়ে ৮৪ লাখ টাকা বেড়েছে। ৫ বছর আগে তাঁর স্ত্রী ব্যবসা থেকে মাত্র সাড়ে ৫২ হাজার টাকা আয় করলেও এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৬ লাখ টাকায়। একই সময়ে তাঁর স্ত্রীর শেয়ার-সঞ্চয়পত্র থেকে আয় বেড়েছে ৪০ লাখ টাকা। এ ছাড়া জাহিরের ছেলের ২০১৮ সালে ব্যবসা থেকে কোনো আয় না থাকলেও এবার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন পৌনে ১০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর আগে জাহিরের ছেলের শেয়ার-সঞ্চয়পত্র খাতে বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ৪৫ হাজার ৪৫২ টাকা। এবার এই খাতে তিনি ৮৩ লাখ ৬১ হাজার ১৫৯ টাকা আয় দেখিয়েছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ১ কোটি ৫৯ লাখ ২ হাজার ৭৪০ টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছিলেন জাহির। পাঁচ বছর পর এবার তিনি ২ কোটি ৫০ লাখ ৩০ হাজার ৫৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। অর্থাৎ পাঁচ বছরে তাঁর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে দেড় গুণ। ২০১৮ সালে বৈদেশিক মুদ্রার পাশাপাশি নগদ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জাহিরের জমা ছিল ১৩ লাখ ১২ হাজার ৩৮৯ টাকা। এবার দাঁড়িয়েছে ৩৩ লাখ ৪১ হাজার ৩৫৩ টাকায়। তবে এবার সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে তাঁর বিনিয়োগ কমেছে। পাঁচ বছর আগে বিনিয়োগ ছিল ৩৭ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩৫ টাকা। এখন কমে হয়েছে ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকায়।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে পাঁচ বছর আগের মতো জাহিরের ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা দামের দুটি জিপ গাড়ি এবং স্ত্রীর ৪০ লাখ টাকা দামের একটি জিপ গাড়ি আছে। ২০১৮ সালে জাহিরের ইলেকট্রনিকসামগ্রী ছিল না। এবার তিনি ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিকসামগ্রী দেখিয়েছিলেন। এ ছাড়া ২০১৮ সালে সংসদ সদস্যের ২৫ হাজার টাকার আসবাব ছিল। এবার তাঁর আসবাব আছে ২৫ লাখ ২৫ হাজার টাকার।
এবার হলফনামায় স্ত্রী ও ছেলের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার তথ্য উল্লেখ করেননি আবু জাহির। যদিও বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে এই খাত থেকে তাঁদের আয় দেখানো হয়েছে। এবারের হলফনামায় জাহির উল্লেখ করেছেন, তাঁর স্ত্রীর ৮৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। ২০১৮ সালে তা ছিল ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৪২ টাকার।
পাঁচ বছরে জাহিরের স্ত্রী ও ছেলের স্থাবর সম্পদ বাড়েনি। তাঁর স্ত্রীর ১ কোটি ৭ লাখ ২০ হাজার টাকার এবং ছেলের ৯৫ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ আছে। এ ছাড়া জাহিরের ৩ কোটি ৭৫ লাখ ২৭ হাজার ৭৪৬ টাকার স্থাবর সম্পদ আছে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তাঁর ঢাকায় দেড় কোটি টাকা দামের একটি ফ্ল্যাট বেড়েছে। এ ছাড়া অকৃষিজমি বেড়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার। তবে ২০১৮ সালে জাহিরের কোনো দায়দেনা না থাকলেও এবার ৭২ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৯ টাকার ব্যাংকঋণ আছে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে আবু জাহিরের জমা দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৯০ টাকা। ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৫৩৮ টাকায়। ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭ লাখ ১৬ হাজার ৯১৬ টাকা। অর্থাৎ ১৫ বছরে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়ে ১৫ গুণ হয়েছে।
২০০৮ সালে জাহির স্ত্রীর নামে কোনো আয়ের তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করেননি। ২০১৩ সালে তিনি স্ত্রীর বার্ষিক আয় দেখান ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩২৫ টাকা। ২০২৩ সালে এসে আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭ লাখ ৮ হাজার ৭৯ টাকায়। অর্থাৎ ১০ বছরে স্ত্রীর আয় বেড়েছে প্রায় ২৫ গুণ। অন্যদিকে ২০১৩ সালে জাহিরের ছেলের বার্ষিক আয় ছিল ২০ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়। পাঁচ বছর পর এখন তাঁর আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ লাখ ৪১ হাজার ৬৫৯ টাকায়। অর্থাৎ ৫ বছরে ছেলের আয় বেড়েছে ১০ গুণের বেশি।
আইনে স্নাতক আবু জাহিরের ২০০৮ সালে ৭১ লাখ ২৫ হাজার ৮০৩ হাজার টাকার অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ ছিল। ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৫৪ লাখ ১ হাজার ৬৮ টাকায়। বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ২৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮০৫ টাকা। অর্থাৎ ১৫ বছরে তাঁর সম্পদ বেড়েছে ৪ গুণের বেশি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তাঁর স্ত্রীর ৯ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৪ টাকার অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ ছিল। ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৭ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৭ টাকায়। ২০০৮ সালের হলফনামায় আবু জাহির তাঁর ছেলের আয় কিংবা অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ দেখাননি। ২০১৩ সালে তাঁর ছেলের অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ ছিল ১ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার। ১০ বছর পর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকায়।
হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে জাহিরের ২৬ ভরি এবং স্ত্রীর ১৫ ভরি সোনা ছিল। তখন ছেলের কোনো সোনা ছিল না। ২০১৪ সালেও জাহির ও তাঁর স্ত্রীর সমপরিমাণ সোনা ছিল। সেবার তাঁর ছেলের ২০ ভরি সোনা থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। ২০১৮ সালে জাহিরের স্ত্রীর সোনার পরিমাণ ৫০ ভরি ও ছেলের ৫৮ ভরি হয়। সেবার তাঁদের তিনজনের মোট সোনা ছিল ১৩৪ ভরি। ২০২৩ সালে এসে তাঁদের সোনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩৯ ভরিতে।