কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে তিন লবণচাষির মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসক বলেছেন, মাঠে কাজ করার সময় বাতাস ও বৃষ্টিতে ঠান্ডা লাগায় অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন তাঁরা।
গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের বগাচতর ঘোনা, আইল্যার ঘোনা ও কুমারখালীতে লবণের মাঠে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হন তাঁরা। মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন, উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের কালাগাজির পাড়ার আবুল ফজলের ছেলে মোহাম্মদ রিদোয়ান (৩৫), একই ইউনিয়নের পানিরছড়া আক্তার কবিরের ছেলে মোহাম্মদ নেছার (৩২) ও পানিরছড়া বারঘর পাড়ার মোহাম্মদ মতনের ছেলে মোহাম্মদ আনছার (২৮)।
স্থানীয় হোয়ানক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মীর কাসেম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেওয়ার পর এলাকার লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠার জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছিল। এর মধ্যে গতকাল সকালে মোহাম্মদ রিদোয়ান, মোহাম্মদ আনছার ও মোহাম্মদ নেছারসহ অন্তত ১০০ জন লবণ চাষি বগাচতর ঘোনা, আইল্যার ঘোনা ও কুমারখালী লবণের মাঠ থেকে পলিথিন আনতে যান। পরে বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে বগাচতর ঘোনায় কাজ করার সময় ঠান্ডা লেগে মোহাম্মদ নেছারসহ ছয় থেকে সাতজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মোহাম্মদ নেছারকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আর বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
চেয়ারম্যান মীর কাসেম চৌধুরী আরও বলেন, একই সময়ে আইল্যার ঘোনায় লবণ মাঠে পলিথিন ওঠাতে গিয়ে ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হয়ে পড়ে আরেক লবণচাষি মোহাম্মদ রিদোয়ান। পরে অন্যান্য চাষিরা মোহাম্মদ রিদওয়ানকে উদ্ধার করে মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। এ ছাড়া বিকেলে বৃষ্টির সময় কাজ করতে গিয়ে ঠান্ডা লেগে মোহাম্মদ আনছার কুমারখালী ঘোনার বাইরে ভাঙার খালে পড়ে যায়। পরে সন্ধ্যার পর খাল থেকে তাঁর ভাসমান অবস্থায় থাকা লাশ উদ্ধার করা হয়। একই দিনে তিন লবণচাষির মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে বলে জানান চেয়ারম্যান।
লবণচাষি মোহাম্মদ নেছারের বাবা আলতাজ কবির প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সকালে তাঁর ছেলে লবণের মাঠে পলিথিন আনতে যান। বিকেলে বাতাস আর বৃষ্টির কবলে পড়ে ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় অন্যান্য চাষিরা তাঁকে প্রথমে বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, লবণের মাঠে কাজ করার সময় বাতাস আর বৃষ্টির কবলে পড়ে ঠান্ডা লেগে গিয়ে মোহাম্মদ নেছারসহ অন্তত ছয় থেকে সাতজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ঠান্ডাজনিত কারণে মোহাম্মদ নেছারের মৃত্যু হয়েছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ইয়াছিন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে তিন লবণচাষির মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছেন তিনি।