বিনা পারিশ্রমিকে টেবিল টেনিস শেখান তিনি

মোমিনুল হকের কাছ থেকে ১৪ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এর মধ্যে চারজন বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।

গাইবান্ধা শহরের পূর্ব পাড়া এলাকায় পরিত্যক্ত টেলিফোন কার্যালয়ের একটি কক্ষ সংস্কার করে প্রশিক্ষণ দেন মোমিনুল হক

গাইবান্ধা জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে টেবিল টেনিস খেলেছেন মোমিনুল হক। এখন তিনি বিনা পারিশ্রমিকে শিশু–কিশোরদের টেবিল টেনিস শেখাচ্ছেন। এ পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে ১৪ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এর মধ্যে চারজন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।

মোমিনুল হকের (৪৩) বাড়ি গাইবান্ধা শহরের পূর্ব পাড়া এলাকায়। স্থানীয়ভাবে তিনি মামুন নামে পরিচিত। তাঁর বাবা এমদাদুল হক মারা গেছেন। মা আবিদা বেগম, স্ত্রী সালিমা বেগম ও দুই মেয়েকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার তাঁর।

মোমিনুলের বিনা পারিশ্রমিকে টেবিল টেনিস শেখানোর উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তাঁর উদ্যোগের পরে মফসস্‌ল শহরে টেবিল টেনিস খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে। বিশেষত কিশোরীরাও এই খেলায় এগিয়ে আসছে। তাঁর শেখানো খেলোয়াড়েরা জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য পাচ্ছেন।
শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর, গাইবান্ধা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক

ছোটবেলা থেকেই টেবিল টেনিস খেলায় আগ্রহ ছিল মোমিনুল হকের। তাঁর চাচাতো বোনেরা টেবিল টেনিস খেলতেন। তা দেখে তিনি এ খেলায় উদ্ধুদ্ধ হন। টেবিল টেনিস খেলোয়ার মিঠু মিয়ার কাছে খেলা শেখেন তিনি। মোমিনুল হক ১৯৯২ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জেলা ও জাতীয় পর্যায়ের টেবিল টেনিস খেলায় অংশ নেন। বর্তমানে তিনি জেলার অন্যতম ক্রীড়া সংগঠন গাইবান্ধা কিশলয় ক্রীড়া চক্রের সাংগঠনিক সম্পাদক।

মোমিনুল হকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি ১৯৯৮ সালের পর ঢাকায় যান। সেখানে তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন। ২০১৭ সালে গাইবান্ধায় ফিরে আসেন। পরের বছর বিনা পারিশ্রমিকে টেবিল টেনিস খেলা চালু করেন। তিনি গাইবান্ধা শহরের পূর্ব পাড়া এলাকায় অবস্থিত পরিত্যক্ত টেলিফোন কার্যালয়ের একটি কক্ষ নিজ উদ্যোগে সংস্কার করে নেন। এখানে গাইবান্ধা কিশলয় ক্রীড়া চক্রের কার্যক্রম চলছে। তিনি এখানে ৮ থেকে ১৫ বছর শিশুদের বিনা পারিশ্রমিকে টেবিল টেনিস খেলা শেখাচ্ছেন।

মোমিনুল হক বলেন, ‘২০১৮-২০২২ সালে তাঁর কাছে টেবিল টেনিস শিখেছে ১৪ জন। এর মধ্যে চারজন বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। বর্তমানে তারা জাতীয় দলের ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। মুঠোফোন ও মাদক থেকে দূরে রাখতে শিশুদের খেলাধুলায় আগ্রহী করতে হবে। এ জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছি। ভবিষ্যতে এ কার্যক্রমকে বড় পরিসরে নিয়ে যেতে চাই। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, গাইবান্ধা-বালাসি সড়ক ঘেঁষে পরিত্যক্ত টেলিফোন কার্যালয়। পুরোনো ভবনটির বাইরে জীর্ণদশা। ভেতরের একটি কক্ষ পরিপাটিভাবে সাজানো। এখানে রয়েছে খেলার টেবিল। পাশে অফিসকক্ষ। কক্ষটির চারদিকের দেয়ালে উপদেশমূলক বাণীসংবলিত বিলবোর্ড। সেগুলোতে লেখা, ‘শরীর ভালো রাখার জন্য খেলাধুলার বিকল্প নেই’, ‘তীক্ষ বুদ্ধি সুক্ষ্ম দৃষ্টি ও অনুপম ছন্দের খেলা টেবিল টেনিস’, ‘খেলাধুলায় বাড়ে বল, মাদক ছেড়ে খেলতে চল’ ‘শিশুদের মোবাইলে গেম খেলা দূরে রাখি, খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ত রাখি’ প্রভৃতি।

মোমিনুলের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া নুসরাত জান্নাত (১৫) বলেন, ‘মোমিনুল স্যারের কাছে বিনা টাকায় টেবিল টেনিস খেলা শিখেছি। এখন বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছি।’

শহরের পূর্ব পাড়া এলাকার সাবেক কাউন্সিলর জি এম চৌধুরী বলেন, পরিত্যক্ত টেলিফোন কার্যালয়টি মাদকের আখড়া ছিল। সন্ধ্যার পর এ ভবনের সামনে ছিনতাই হতো। বর্তমানে খেলাধুলা হওয়ায় সব বন্ধ হয়েছে। ওই এলাকার পরিবেশ পাল্টে গেছে। শিশুরাও আনন্দিত।

গাইবান্ধা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর প্রথম আলোকে বলেন, মোমিনুলের বিনা পারিশ্রমিকে টেবিল টেনিস শেখানোর উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তাঁর উদ্যোগের পরে মফসস্‌ল শহরে টেবিল টেনিস খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে। বিশেষত কিশোরীরাও এই খেলায় এগিয়ে আসছে। তাঁর শেখানো খেলোয়াড়েরা জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য পাচ্ছেন।