নওগাঁর রানীনগরে অবৈধ জাল উদ্ধার অভিযানের নামে জেলেদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বড় কালিকাপাড়া হঠাৎপাড়া এলাকার একটি বাড়ি
নওগাঁর রানীনগরে অবৈধ জাল উদ্ধার অভিযানের নামে জেলেদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বড় কালিকাপাড়া হঠাৎপাড়া এলাকার একটি বাড়ি

নওগাঁয় পাউবো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযানের নামে জেলেদের বাড়িঘরে হামলার অভিযোগ

নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় অবৈধ জাল উদ্ধার অভিযানের নামে জেলেদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, আসবাব পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার রাতে উপজেলার আতাইকুলা খালের ওপর নির্মিত ১ নম্বর জলকবাটের দুই পাশে বসবাস করা জেলেদের বাড়িতে হামলা হয় বলে দাবি করেছেন তাঁরা।

জেলেদের অভিযোগ, অবৈধ সুতি জাল উদ্ধারের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নওগাঁ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমানের নেতৃত্বে ১৬ থেকে ১৭ জন ব্যক্তি হাঁসুয়া ও রড নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় তাঁদের বাড়িঘরে হামলা করে। তাঁদের মাছ ধরার জালের পাশাপাশি বালিশ, তোশক জব্দ করে পুড়িয়ে দেয়। পরে তারা শ্রীমতখালী খালের ওপর নির্মিত ২ ও ৩ নম্বর জলকবাট-সংলগ্ন এলাকার জেলেদের বাড়িতেও একইভাবে হামলা করে। এ সময় বাড়ির আসবাবও ভাঙচুর করা হয়।

৩ নম্বর জলকবাট-সংলগ্ন পাউবোর পরিত্যক্ত অতিথিশালায় বসবাসকারী সাদ্দাম হোসেন নামের এক যুবক বলেন, ‘গতকাল রাতে জাল উদ্ধারের নামে পাউবোর লোকেরা আমার বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। বাড়িতে কোনো জাল না পেয়ে কাঁথা-বালিশে আগুন দেয়। বেশ কয়েকটা কাচের গ্লাস ভেঙেছে। ওরা ১৬-১৭ লোক আসছিল। সবার হাতে হাঁসুয়া ও রড ছিল।’

বড় কালিকাপুর মোড়ের দোকানদার টিপু খন্দকার বলেন, ‘আমার দোকানে ধান শুকানোর জন্য একটা নেট জাল ও তোড়া জাল ছিল। সেইগুলা বের করে নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া তিন বস্তা পটেটো চিপস নিয়ে গেছে। কোনো টাকা দেয়নি। ওদের সবার হাতে সন্ত্রাসীদের মতো হাঁসুয়া ও রড আছিল। ভয়ে কিছু করতে পারিনি। ইমরান নামের এক ছেলে প্রতিবাদ করায় আমার সামনেই ওকে মারধর করেছে।’

বড় কালিকাপুর হঠাৎপাড়ার বাসিন্দা বিবিজান বলেন, রাতে তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। রাত নয়টার দিকে হঠাৎ ব্যাপক শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। দরজা খুলতে দেরি হওয়ায় কোপ দিয়ে টিনের দরজা ভেঙে তিন-চারজন লোক ঘরের মধ্যে ঢুকে সুতি জাল খুঁজতে শুরু করে। বাড়ির আসবাব সব এলোমেলো করে ফেলেন। গোয়ালঘরের দরজা কেটে গরু নেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘হামার কথা হলো, অবৈধ জাল প্যালে লিয়ে য্যাক। কিন্তু এভাবে সন্ত্রাসের মতোন বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে ভাঙচুর করা এগুলা কী? সরকারি লোকজন কি এভাবে রাতের আঁধারে এ রকম কোনো কিছু করে?’

অভিযোগের বিষয়ে পাউবোর নওগাঁ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগ সঠিক নয়। অবৈধ জাল উদ্ধার অভিযানে গিয়ে বেশ কিছু অবৈধ জাল উদ্ধার করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। বরং অভিযানে গেলে স্থানীয় লোকজনই বাধা দেন এবং তাঁদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন।

ফয়জুর রহমান বলেন, রানীনগরের মিরাট ইউনিয়নের কালিকাপুর ও আতাইকুলা এলাকায় হাসাইগাড়ী বিল, দিঘলীর বিল ও শৈলগাছী বিলের পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনটি জলকবাট আছে। তার আশপাশে বসবাসকারী কিছু লোক নিজেরা জলকবাটের গেট খুলে খালের পানি ছেড়ে দিয়ে অবৈধ সুতি জাল দিয়ে মাছ শিকার করেন। এ ব্যাপারে তাঁদের একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও ইচ্ছেমতো জলকবাট খুলে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকার করায় গতকাল রাতে আতাইকুলা ও বড় কালিকাপুর এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযান প্রচুর অবৈধ সুতি জাল পাওয়া যায়। স্থানীয়দের সামনেই সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়। ভবিষ্যতে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় অভিযান চালানো হবে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক আবদুল আউয়াল বলেন, ‘বিষয়টি স্থানীয়দের মাধ্যমে আমি জেনেছি। পাউবো থেকে অভিযানের বিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। নিয়মবহির্ভূত কিছু ঘটে থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’