খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া নদীর পাশ থেকে প্লাস্টিক বোতল, প্লাস্টিকের প্যাকেটসহ নানা ধরনের অপচনশীল ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে অপসারণ ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করেন উপকূলীয় বনজীবীদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দাকোপ-কয়রা সহব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা।
আজ সোমবার সকাল ১০টায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বেসরকারি সংস্থা ইউএসএআইডি ইকোসিস্টেম ও প্রতিবেশ অ্যাক্টিভিটি সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ অভিযানের আয়োজন করে।
বনজীবীদের সংগঠন দাকোপ-কয়রা সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকেরা বলেন, প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক সুন্দরবনে বেড়াতে এসে ফেলে যান নানা রকম প্লাস্টিক বর্জ্য। সঙ্গে যোগ হয় স্থানীয় লোকজনের ব্যবহারিত বিভিন্ন পলিথিন বর্জ্য। অপচনশীল এসব প্লাস্টিক বর্জ্যের ভারে হুমকিতে পড়েছে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি। বর্তমানে ৯২ দিনের সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ মৌসুম চলছে। আজ দিনভর সুন্দরবনের পাশের লোকালয়ে ও নদীতে যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য সরানোর মাধ্যমে সুন্দরবন সুরক্ষায় আমরাও ভূমিকা রেখেছি।
স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, এসব প্লাস্টিক বর্জ্য বস্তায় ভর্তি করে স্থানীয় প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিনিধিদের কাছে দেওয়া হয়েছে। তারা এগুলো ট্রাকযোগে খুলনা শহরে নিয়ে প্লাস্টিকের প্রকারভেদে আলাদা করে রিসাইক্লারদের কাছে হস্তান্তর করে এর রিসাইক্লিং নিশ্চিত করবে।
বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) প্রতিবেশ অ্যাক্টিভিটি প্রকল্পের সাইট অফিসার মো. আলাউদ্দিন বলেন, সুন্দরবনের নদ–নদীতে আবর্জনা বহুল আলোচিত একটি বিষয়। বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের কণা সুন্দরবনের পরিবেশের সঙ্গে যে হারে মিশে যাচ্ছে, তাতে আমাদের খাদ্যশৃঙ্খলে প্লাস্টিকের উপস্থিতি, মানবদেহে, রক্তে, মলে এমনকি মাতৃদুধেও প্লাস্টিক কণা পাওয়া যাচ্ছে। এর ভয়াবহতার পরিমাপ করা এখনো সম্ভব হয়নি।
আলাউদ্দিন আরও বলেন, পর্যটকদের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের অন্তিম গন্তব্য গহিন সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ-নদী–খাল। সেখানে পড়ে থাকা প্লাস্টিক যদি লোকালয়ে নিয়ে আসা না হয়, তবে এর পরিণাম শুধু এই সুন্দরবন উপকূলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে। আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস ছিল সামর্থ্য অনুযায়ী সেই পরিণামকে যতটা সম্ভব সীমিত করা।
সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, সুন্দরবনের আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার এ উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করলে অবশ্যই সফল হওয়া সম্ভব হবে। ভবিষ্যতে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকাগুলোতে এ ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করলে বনের পরিবেশের জন্য খুবই উপকার বয়ে আনবে।