কক্সবাজারে পাহাড় কাটার ঘটনায় আ.লীগ নেতাসহ ২০ জনের নামে মামলা

সংঘবদ্ধ একটি চক্র এক বছর ধরে প্রায় ১০ একর আয়তনের সরকারি একাধিক পাহাড় কেটেছে
ফাইল ছবি

কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীতে সরকারি পাহাড় কেটে বালু বিক্রির অভিযোগে ২০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার রাতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি করেন।

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন পিএমখালী পরানিয়াপাড়ার বালু ব্যবসায়ী ওবাইদুল করিম; সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য মাহমুদুল করিম ওরফে মাদু এবং নয়াপাড়ার বাসিন্দা ও পিএমখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কাদের। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৬ আগস্ট প্রথম আলোয় পিএমখালীতে সরকারি পাহাড় কেটে বালুর ব্যবসার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালকের নির্দেশে ৮ আগস্ট দুপুরে পিএমখালীর পাহাড় কাটার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিবেশ ও বন বিভাগের একটি যৌথ দল। ওই দলের সদস্যরা পিএমখালীর ছনখোলা এলাকার তাজমহলের ঘোনা, ঘোনারপাড়া, তেইল্যাকাটা, পশ্চিমপাড়া নামক স্থানে পাহাড় কাটার দৃশ্য দেখতে পান। পাহাড়গুলোর চারদিকে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং বিচ্ছিন্ন কিছু ঘরবাড়ি রয়েছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাজমুল হুদা বলেন, মামলাটি তদন্ত করবেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত এ মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন জেলা পরিষদের সদস্য মাহমুদুল করিমের বড় ভাই মামুন; ছনখোলার জাহাঙ্গীর আলম; তোতকখালীর জোসেফ; তোতকখালীর সাবেক ইউপি সদস্য তাজমহল ও কায়েস সিকদার; দক্ষিণ খুনিয়াপালংয়ের নুরুল কবির বাবুল; ঘোনারপাড়ার লুৎফর রহমান ও সোনা আলী; পরানিয়াপাড়ার কাজল ও মনিরুল ইসলাম; খুরুশকুল লামাজিপাড়ার নাছির উদ্দিন; উত্তর পরানিয়াপাড়ার মো. সোহেল; তোতকখালীর সিরাজ ও শাহজাহান; নয়াপাড়ার হারুন; ডিকপাড়ার মোস্তাক আহমদ ও নুরুল আমিন। আসামিরা সবাই ডাম্প ট্রাকের মালিক ও বালু ব্যবসায়ী।

আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল করিম বলেন, সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পরিবেশ আইনের মামলায় তাঁকে আসামি করেছে। বিষয়টি তিনি আইনগতভাবে মোকাবিলা করবেন। মামলার প্রধান আসামি ওবাইদুল করিম বলেন, তিনিও পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত নন।

মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম বলেন, মামলাটি পরিবেশ অধিদপ্তর তদন্ত করবে। তদন্তে ঘটনার সবকিছু উঠে আসবে।

পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল মজিদ বলেন, ওবাইদুল করিমের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ চক্র এক বছর ধরে প্রায় ১০ একর আয়তনের সরকারি একাধিক পাহাড় কেটেছে। তারা শতকোটি টাকা মূল্যের প্রায় দেড় কোটি ঘনফুট বালু ও মাটি বিক্রি করেছে। পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় পাহাড় কাটা বন্ধ হয়নি।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, মাসখানেক আগে কেটে ফেলা সেই পাহাড়ে নতুন করে বনায়ন করেছে বন বিভাগ। সেখানে এখন পাহাড়নিধন ও বালুর ব্যবসা বন্ধ আছে।