১১ বছর আগে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যশোরের সাবেক পুলিশ সুপার ও নৌ পুলিশে সংযুক্ত রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনিসুর রহমানসহ ৪৮ জনকে বিবাদী করে আদালতে দুটি মামলার আবেদন করা হয়েছে।
আজ বুধবার বিকেলে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহমেদের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে এ আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন দুটি গ্রহণ করে আদেশের জন্য রেখেছেন। এর আগে গত রোববার একই অভিযোগে ডিআইজি আনিসুর রহমানসহ আটজনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়।
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামের পল্লিচিকিৎসক বজলুর রহমান ও আনিসুর রহমানকে বন্দুকযুদ্ধে নামে হত্যার অভিযোগে নিহত বজলুরের স্ত্রী রেশমা বেগম ও নিহত আনিসুরের ভাই মুনছুর আলী বাদী হয়ে এ মামলার আবেদন করেন।
বজলুর হত্যা মামলার মোট আসামি সাতজন। ডিআইজি আনিসুর ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন মনিরামপুর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্যা খবির আহমেদ, উপপরিদর্শক (এসআই) তাসমীম আহমেদ ও শাহীন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মনিরামপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র কাজী মাহামুদুল হাসান, উপজেলার হাকোবা গ্রামের আনিচুর রহমান ও হাজরাকাটি গ্রামের শহিদুল ইসলাম।
অন্যদিকে আনিসুর রহমান হত্যা মামলার মোট আসামি ৪১ জন। এর মধ্যে ডিআইজি ছাড়া উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন মনিরামপুর থানার তৎকালীন ওসি আলী আজম, এসআই হিরন, সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন।
বজলুর হত্যা মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর উপজেলার জয়পুর বাজারের পল্লিচিকিৎসক বজলুরকে তাঁর দোকান থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। স্বজনেরা খোঁজ নিতে গেলে জানানো হয়, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের নির্দেশে আটক করা হয়েছে। এরপর তাঁকে পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং ওসি খবির আওয়ামী লীগের নেতাসহ অন্য আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। বজলুর বিএনপির রাজনীতি করেন এবং তিনি ‘ক্রসফায়ারের’ তালিকার ১ নম্বরে আছেন বলে ওই নেতারা জানান। ওই রাতে বজলুরকে থানায় মারধরের পর গভীর রাতে যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বেগারিতলা এলাকায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। পরদিন সকালে পরিবারকে মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হয়। এরপর আসামিরা যোগসাজশ করে বজলুরের লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে পরিবেশ অনুকূলে হওয়ায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে বাদী আদালতে এসেছেন।
অন্যদিকে আনিসুর হত্যা মামলার আরজিতে বলা হয়, ২০১৩ সালের ২২ মার্চ সকালে জয়পুর গ্রামের ফজলুর রহমানকে পুলিশ বাড়ি থেকে আটক করে। এ সময় গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে ফজলুরকে উদ্ধার করতে গেলে মনিরামপুর থানার তৎকালীন ওসি আলী আজম খান জনগণকে লক্ষ্য করে গুলি করলে আনিসুর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন। এম মধ্যে গ্রামের বাসিন্দারা হামলার কথা মাইকে প্রচার করলে পুলিশ ও অন্য আসামিরা ফাঁকা গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় ঘটনার পর মামলা করতে পারেননি বাদী। বর্তমানে পরিবেশ অনুকূলে আসায় আদালতে মামলা করতে এসেছেন।
একটি মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী শহীদ মো. ইকবাল হোসেন বলেন, আনিসুর রহমান যশোরের পুলিশ সুপার থাকাকালে বন্দুকযুদ্ধের নামে দুজনকে হত্যা করে পুলিশ। এ জন্য দুটি মামলার আবেদন করা হয়েছে। আদালত গ্রহণ করে আদেশের জন্য রেখে দিয়েছেন।
এর আগে গত রোববার একই অভিযোগে ডিআইজি আনিসুরসহ আটজনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়। মনিরামপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামের আবু সাঈদ নামের এক যুবককে আটকের পর বন্দুকযুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলাটি করা হয়।