দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই প্রথম এক মঞ্চে বসলেন ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এ কে আজাদ এবং পরাজিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। তবে এক মঞ্চে দুই নেতা বসলেও কারও সঙ্গে কোনো কথা হয়নি।
এর আগে এ কে আজাদ ও শামীম হক সর্বশেষ পাশাপাশি বসেছিলেন গত ৪ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাই করার দিন। এরপর এই দুই নেতাকে আর এক মঞ্চে দেখা যায়নি। এর মধ্যে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে প্রায় ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম হককে পরাজিত করে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ কে আজাদ।
৭৮ দিন পর এই দুই নেতাকে আজই প্রথম এক মঞ্চে দেখা গেল। বিকেল পাঁচটার দিকে ফরিদপুরে ‘পিতা এবং মুজিব মঞ্চ’–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে বসেন তাঁরা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে নবনির্মিত মঞ্চের উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে ‘পিতা এবং মুজিব মঞ্চ’–এর উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান।
সরেজমিনে দেখা যায়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাঝে বসে আছেন মন্ত্রী আবদুর রহমান। তাঁর বাঁ পাশে পর্যায়ক্রমে বসা ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ঝর্না হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াছিন কবির। মন্ত্রীর ডান পাশে বসা ছিলেন ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে আজাদ, জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ও ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক। এ কে আজাদ ও শামীম হক এক মঞ্চে বসলেও কারও সঙ্গে কেউ কথা বলেননি বা কুশল বিনিময় করেননি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছাড়াও বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন এ কে আজাদ। এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইয়াছিন কবির। সবশেষে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার সভাপতির বক্তব্য দেন। শামীম হক, শাহ ইশতিয়াক, ঝর্না হাসান ও আব্দুর রাজ্জাক বিশেষ অতিথি হলেও তাঁরা বক্তব্য দেননি। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক সময়ের অভাবে সবাইকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মন্ত্রী আবদুর রহমান ১৬ মিনিট বক্তব্য দেন। ওই সময় এ কে আজাদ ও শামীম হকের মধ্যে একটি শূন্য চেয়ার থাকলেও প্রায় পাশাপাশি বসা ছিলেন। কিন্তু কোনো কথা কিংবা চোখাচোখি হয়নি তাঁদের মধ্যে।
আবদুর রহমান তাঁর বক্তব্যের শুরুর দিকে শামীম হকের প্রশংসা করে শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে নিজ অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার নির্মাণের জন্য প্রশংসা করেন। নাম উল্লেখ করেন সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াকের। স্বাগত জানান সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ঝর্না হাসানকে। বক্তব্যের প্রথম দিকে এ কে আজাদের নাম উল্লেখ না করলেও শেষ দিকে মন্ত্রী আবদুর রহমান সংসদ সদস্যের বক্তব্যের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ভোলা থেকে ফরিদপুরে গ্যাস আনা, ফরিদপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আবদুর রহমান বলেন, ‘বিগত নির্বাচন নিয়ে কিছু ভুল–বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের আগে এমনটি হতেই পারে। আবার নির্বাচনের পর সব মিটে যায়। আমরা এক সাথে সকলে মিলে ফরিদপুরের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, মাদক আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা একত্রিত হয়ে কাজ করলে এ সমস্যা থাকবে না।’
এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কে আজাদ আবদুর রহমানের প্রতি আহ্বান জনিয়ে বলেন, ‘ফরিদপুরে প্রচুর তরুণ যুবক বেকার, তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। ফরিদপুরে শিক্ষার মান নিম্নমুখী, শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করতে হবে। ফরিদপুরে নীরবে চাঁদাবাজি হচ্ছে, মাদকের বিস্তার ঘটছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কিছু মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করলেও মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমাদের সম্মিলিভাবে সন্ত্রাসবিরোধী, মাদকবিরোধী চাঁদাবাজিবিরোধী ভূমিকা পালন করতে হবে।’
ফরিদপুরে পদ্মা সেতুর সুবিধা কাজে লাগিয়ে ফরিদপুরসহ দক্ষিণের জেলাগুলোতে শিল্পকারখানা স্থাপনে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে এ কে আজাদ বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। দক্ষিণের ২১টি জেলায় বড় কোনো শিল্পকারখানা নেই। আমরা এ সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে তা আমাদের জন্য হবে দুর্ভাগ্যজনক।’