হত্যা
হত্যা

উত্ত্যক্তের জেরে হত্যার ঘটনা, রূপ নিল প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের ‘রাজনৈতিক মামলায়’

ফরিদপুরের সালথায় উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় এক তরুণকে হত্যার ঘটনায় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াদুদ মাতুব্বরকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। আসামির তালিকায় আওয়ামী লীগ অন্য নেতা–কর্মীরা রয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, অরাজনৈতিক ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। তাঁদের ঘায়েল করতে প্রতিপক্ষের ইন্ধনে এই মামলা করা হয়েছে।

উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের জয়ঝাপ গ্রামের ইমাম বাড়ি মেলায় ১৪ অক্টোবর বিকেলে এক তরুণীকে (১৮) উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় কাশেম ব্যাপারী (২৮) নামের এক তরুণকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার নিহত কাশেমের বাবা পান্নু ব্যাপারী বাদী হয়ে ২৯ জনের নামে থানায় হত্যা মামলা করেন। তাঁদের বাড়ি গট্টি ইউনিয়নের মধ্যবালিয়া গট্টি গ্রামে। পুলিশ এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পূর্বশত্রুতার জেরে প্রধান আসামি ওয়াদুদ মাতুব্বরের নির্দেশে অন্য আসামিরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কাসেম ব্যাপারীকে ধারালো চাকু দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেন।

মামলায় জাহাঙ্গীর কাজী, বাহাদুর মোল্লা, তৈয়ব মোল্লা ও মো. সোহেল মোল্লাকে যথাক্রমে দুই, তিন, চার ও পাঁচ নম্বর আসামি করা হয়েছে। তাঁরা জয়ঝাপা গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয়দের ভাষ্য, হত্যাকান্ডের সময় ওই চার আসামি উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁরা হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত।

অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন গট্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর মোল্লা ও উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক জবিউল্লাহ। আসামিদের অন্তত ২৪ জনের বাড়ি গট্টি, বালিয়া গট্টি ও আড়ুয়াকান্দি গ্রামে যারা সবাই ওয়াদুদ মাতুব্বরের সমর্থক হিসেবে পরিচিতি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গট্টি ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে দুটি পক্ষ সক্রিয়। একটি অংশের নেতৃত্ব দেন ওয়াদুদ মাতুব্বর। তাঁর সঙ্গে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোনান কাজী, গট্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর মোল্লা, ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি আজিজ মোল্লা প্রমুখ। অন্য অংশের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বাদশা মিয়া। বয়স বেশি হওয়ায় সম্প্রতি তিনি কিছুটা নিষ্ক্রিয়। নতুন করে নেতৃত্বে এসেছেন উপজেলা যুবলীগের সম্পাদক জাহিদ মাতুব্বর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নূরু মাতুব্বর, গ্রাম্য মোড়ল হিসেবে পরিচিত হিরু মোল্লা ও হাসান ব্যাপারী। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন জাহিদ মাতুব্বরের ভায়রা খায়রুল বাসার (আজাদ), যিনি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

কাশেম ব্যাপারী হত্যাকাণ্ডের পর সোমবার রাত ও মঙ্গলবার সকালে বালিয়া বাজারে মোশারফ তালুকদারের সারের দোকান থেকে মালামাল লুট করা হয়। এ ছাড়া পাটপাশা গট্টি এলাকার হারেজ মাতুব্বর, মোফাজ্জেল, মো. ইকরাম, ওমর মাতুব্বরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুট করা হয়।

মামলার আসামি ওয়াদুদ মাতুব্বর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আমি এলাকাছাড়া। হত্যার ঘটনা ঘটেছে জয়ঝাপ গ্রামে। অথচ আমাদের আসামি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উত্ত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে। বিষয়টি অরাজনৈতিক। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে রাজনৈতিকভাবে এ মামলা করা হয়েছে।’

এ অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাসার বলেন, নিহতের পরিবার নিরীহ প্রকৃতির এবং বিএনপির সমর্থক। এ মামলায় আসামি করার ব্যাপারে পান্নু ব্যাপারীর সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। তিনি নিজেই আসামিদের নাম দিয়েছেন।’  

এ ব্যাপারে জানতে মামলার বাদী পান্নু ব্যাপারীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন ধরেন তাঁর ভাতিজা ইকরাম ব্যাপারী। তিনি বলেন, ‘আসামিদের নাম চাচা (পান্নু ব্যাপারী) দিয়েছেন। তবে বিএনপি নেতা খায়রুল বাশার আমাদের সাহায্য করেছেন। আমরা তো আদালত, থানা সব জায়গায় যেতে পারি না। তিনি আমাদের নেতা।’
সালথা থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, কাশেম ব্যাপারী হত্যাকাণ্ডে বাতেন শেখ নামের এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা
এদিকে ওই মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে জাহিদ মাতুব্বর ও খায়রুল বাসারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এর প্রতিবাদে গত শুক্রবার বালিয়া বাজার এলাকায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সালথা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানসহ কয়েকজন বিএনপি নেতা। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গট্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বজলু মাতুব্বর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরু মাতুব্বর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফজলুল মতিন, বাদশা মিয়ার ভাতিজা কামরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সহসভাপতি মুনসুর মাতুব্বর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিক মাতুব্বর প্রমুখ।

আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমি তো সবাইকে চিনি না। আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মী উপস্থিত ছিলেন কি না, জানা নেই। তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা–কর্মী বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন বলে শুনেছি।’