‘প্রয়োজনে পদত্যাগ’ করবেন আনোয়ারুজ্জামান, নজরুল দেবেন ‘শেষ রক্তবিন্দু’

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম (ডানে)
ছবি: সংগৃহীত

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা গতকাল সোমবার রাত ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। শেষ দিনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত শেষ নির্বাচনী সমাবেশ হয়েছে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম ওরফে বাবুল পূর্বঘোষিত সিলেট নগরের বন্দরবাজার কোর্ট পয়েন্টে নির্বাচনী পথসভা করতে পারেননি। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে শেষ মুহূর্তে তিনি সিলেট নগরের রিকাবীবাজারের কবি নজরুল অডিটরিয়ামের সামনে পথসভা করেছেন। পুলিশ নির্ধারিত স্থানে পথসভা করতে দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

তবে সিলেট মহানগর পুলিশ বলছে, নজরুল ইসলাম নির্বাচনের পথসভার জন্য আগে কোনো অনুমতি নেননি। এ ছাড়া তিনি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ‘মঞ্চ’ নির্মাণ করে পথসভা করতে চেয়েছিলেন। এর কারণে জনস্বার্থে সেখানে কোনো সভা না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর শেষ নির্বাচনী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, সিলেটের উন্নয়নে সৎ, যোগ্য ও কর্মঠ মানুষের প্রয়োজন। সে জন্য প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নৌকা প্রতীক দিয়ে সিলেটবাসীর কাছে পাঠিয়েছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি উল্লেখ করে নানক বলেন, এখন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নির্বাচিত হলে সিলেটে প্রধানমন্ত্রীর মুখ উজ্জ্বল করতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হবে। নির্বাচনের দিন ঝড়বৃষ্টি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে মানুষ নৌকা প্রতীককে জয়যুক্ত করবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর শেষ নির্বাচনী সমাবেশ। গতকাল রাতে নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে

নির্বাচনী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ। সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান।

মেয়রপ্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সিলেটবাসীর দাবির সঙ্গে তিনি সব সময় একমত থাকবেন। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে তিনি মেয়র পদও ছেড়ে দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তর করতে চান। তিনি নির্বাচিত হতে পারলে সিলেট সিটি করপোরেশন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ ছাড়া যেকোনো দাবি নিয়ে তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে পারবেন। সিলেটবাসীর জন্য তিনি ঢাকা-সিলেট দ্রুতগতির ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেবেন।

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেটে জলাবদ্ধতা থেকে শুরু করে সব ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য নিজে মাঠে থেকে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। এ জন্য তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী, সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহ ফরিদ, আশফাক আহমদ, নিজাম উদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বিজিত চৌধুরী, ফয়জুল আনোয়ার আলাউর, শাহ মোশাহিদ আলী প্রমুখ।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলামের প্রচার মিছিল। গতকাল বিকেলে গতকাল বিকেলে নগরের হুমায়ুন রশীদ চত্বর এলাকায়

এদিকে রিকাবীবাজার এলাকায় শেষ নির্বাচনী পথসভায় জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সরকার দলীয় নৌকার প্রার্থী নির্লজ্জভাবে প্রশাসনকে ব্যবহার করছেন। নির্বাচনী আইনকে তোয়াক্কা করছেন না। ভোটের দিন জনগণের রায়কে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য সন্ত্রাসীদের জড়ো করছেন। নির্বাচন কমিশন সবকিছু দেখেও নীরব ভূমিকা পালন করছে। পুরো প্রশাসন তাঁকে জয়ী করাতে উঠে পড়ে লেগেছে। এ অবস্থায় ভোটাররাই পারেন এসব ষড়যন্ত্র ও অন্যায়ের সঠিক জবাব দিতে।

সিলেটবাসীকে সব অন্যায়-অবিচারের জবাবে লাঙ্গল মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নগরবাসী দেখেছেন, নির্বাচনী প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকে আমি স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়েই আমার প্রচারকাজ চালিয়েছি। কেন্দ্র থেকে আমার দলের কোনো নেতাকে নিয়ে আসিনি। কারণ একটাই, আমি মনে করি, এই নগরের মানুষই বিচার-বিশ্লেষণ করে তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। তাঁরা কোনো নেতার কথায় ভোট দেবেন না। অন্যদিকে সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতারা দিনরাত সিলেট অবস্থান করে প্রশাসনকে প্রভাবিত করছেন। আমি বিশ্বাস করি, ভোটের দিন ভোটাররা তাঁদের বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এর জবাব দেবেন।’

মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে চান না জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করতে পারব না কিংবা যেটা আমার আওতায় নেই, সেটির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে চাই না। আমি কী করতে পারব বা কী করতে চাই, তা আমার নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরেছি। নগরবাসী সেটা দেখেছেন। অথচ আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অহরহ এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয় করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করি, সম্মানিত ভোটাররা এসব বিবেচনা করেই তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা আমার ওপর বিশ্বাস রাখবেন, আমি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা আমার শরীরে শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আবদুল্লাহ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, অতীতে এই সিলেটবাসী লাঙ্গলের দুঃসময়েও জাতীয় পার্টির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এবারও তাঁরা দাঁড়াবেন এবং সব অন্যায়ের দাঁতভাঙা জবাব দেবেন।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা সদস্যসচিব সাইফুদ্দিন খালেদ, কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, সিলেট মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব আবদুস শহীদ লস্কর, প্রবাসী ব্যবসায়ী নেতা হীরা মিয়া, জাপা নেতা সুফিয়ান খান, সেবুল আহমদ, আবুল কালাম তাপাদার, মর্তুজা আহমদ প্রমুখ।