বাপ-দাদার জমি ফেরত ও তিন সাঁওতাল হত্যার বিচারসহ সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে বিক্ষোভ মিছিল। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইবান্ধা শহরে
বাপ-দাদার জমি ফেরত ও তিন সাঁওতাল হত্যার বিচারসহ সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে বিক্ষোভ মিছিল। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইবান্ধা শহরে

গাইবান্ধায় সাঁওতাল হত্যার বিচারের দাবিতে মিছিল, ডিসি ও এসপিকে স্মারকলিপি

বাপ-দাদার জমি ফেরত ও তিন সাঁওতাল হত্যার বিচারসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন সাঁওতালরা। এসব দাবি বাস্তবায়নে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শতাধিক সাঁওতাল নারী–পুরুষ গাইবান্ধা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে সাঁওতালরা তির–ধনুক ও ফেস্টুন হাতে অংশ নেন।

একপর্যায়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। পরে একই দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে পৃথকভাবে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপিতে বাপ-দাদার জমি ফেরত ও তিন সাঁওতাল হত্যার বিচারসহ সাত দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ এসব কর্মসূচি পালন করে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাক্সে। বক্তব্য দেন আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম, মানবাধিকারকর্মী গোলাম রব্বানী, আইনজীবী কুশলাশীষ চক্রবর্তী ও ফারুক কবীর, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা প্রিসিলা মুরমু, ব্রিটিশ সরেন, সাঁওতাল হত্যা মামলার বাদী থোমাস হেমব্রম, সমাজকর্মী ময়নুল ইসলাম, মনির হোসেন, হাসান মোর্শেদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সাঁওতাল হত্যার বিচার, আসামিদের গ্রেপ্তার, গুলিতে আহত সাঁওতাল, বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের ক্ষতিপূরণ, সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমিসংকট নিরসনে পৃথক ও স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠনসহ সাত দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি; সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন, সারা দেশে সাঁওতালসহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মানুষ মানবাধিকার ও জীবনমানের দিক দিয়ে আজও নানাভাবে বঞ্চিত। সমতলের ‘আদিবাসী’রা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তাঁদের সংস্কৃতি ও ভাষা বিলুপ্ত হচ্ছে। পরিণত হচ্ছে দেশের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীতে। অধিকাংশই ভূমিহীন, তাঁদের কাছে ভূমি নেই। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ক্রমাগত সাঁওতালসহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সাঁওতালরা তাঁদের অধিকার ও মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত।

অবিলম্বে তিনজন সাঁওতাল হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, তিন সাঁওতাল হত্যার আট বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। আজও বিচারকাজ শুরু হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে সাঁওতালদের পুনর্বাসনসহ নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়িত হয়নি।
বক্তারা আরও বলেন, নিজের অধিকার আদায় করতে গিয়ে তিনজন সাঁওতাল জীবন দিয়েছেন। তাই এই আন্দোলন ব্যর্থ হবে না। সাঁওতালদের হত্যার সঙ্গে গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কামাল আজাদ সরাসরি জড়িত ছিলেন। তাঁরও কোনো বিচার হয়নি। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।

বক্তারা অবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তার ও হত্যার বিচারসহ সাত দফা বাস্তবায়নের দাবি জানান। সাতটি দাবি হচ্ছে—বিরোধপূর্ণ জমিতে ইপিজেড নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ, তিন সাঁওতাল হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, সাঁওতাল-বাঙালিদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, বাপ-দাদার জমি ফেরত, সাঁওতালদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ক্ষতিপূরণ, সাঁওতাল শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক স্কুল প্রতিষ্ঠা ও সাঁওতালদের ভূমি কমিশন গঠন।

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এসব জমি উচ্ছেদে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে তিন সাঁওতাল নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হন।