কোটা বাতিলের দাবি

চতুর্থ দিনের মতো বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ

কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কুয়াকাটা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তাঁরা। এ সময় সেখানে তাঁরা সমাবেশ করেন এবং বই পুড়িয়ে কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবি জানান।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার সঙ্গে আলোচনা শেষে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। প্রায় সোয়া ৫ ঘণ্টা অবরোধের কারণে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের দুপ্রান্ত অসংখ্য যাত্রী ও পণ্যবাহী যান আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সীমাহীন কষ্ট পান হাজার হাজার যাত্রী। বিশেষ করে ভ্যাপসা গরমে নারী, বৃদ্ধ ও শিশু যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। গত সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবিতে এ আন্দোলন শুরু করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে তাঁরা মূল ফটকের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে সেখানে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সেখানে বই পুড়িয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান তাঁরা।

বরগুনা থেকে আসা যাত্রী খলিলুর রহমান বলেন, ‘বরিশালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলাম। দেড় ঘণ্টা ধরে বাসের মধ্যে আটকা পড়ে আছি। জানি না কখন অবরোধ শেষ হবে। খুব কষ্ট হচ্ছে।’

বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ৫৬ শতাংশ কোটা কোনো দেশের স্বাভাবিক অবস্থা হতে পারে না। মেধাবীরা পরিশ্রম করে চাকরি পাবেন, কোটায় নয়। কোটাপ্রথা কখনোই জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে না। এটা দেশের মেধাবীদের সঙ্গে একধরনের উপহাস। তাঁরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

সমাবেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ইসমাইল তালুকদার, লোকপ্রশাসন বিভাগের হাসিবুর রহমান শেখ, মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবু নছর মোহাম্মদ তোহা, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাইনুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের তামিম ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অপর্ণা আক্তার।

মহাসড়কে জড়ো হয়ে চলছে বিক্ষোভ

আন্দোলনে অংশ নেওয়া সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জিহাদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত আমাদের সঙ্গে প্রহসন ছাড়া কিছু না। এই নাটকের অবসান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তারেক রহমান বলেন, সরকারি চাকরিতে পুনরায় কোটাপদ্ধতি বহাল রাখা হয়েছে। সরকার তো মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা ও তাঁদের প্রাপ্য সম্মান দিচ্ছে। কিন্তু কোটা রেখে কেন? বাকিদের কেন অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে? যাঁরা মেধাবী, তাঁদের যোগ্যতার কেন অবমূল্যায়ন করা হবে? এ সিদ্ধান্ত দেশকে মেধাশূন্য করা ছাড়া কিছুই না। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোটা চাই না। অবিলম্বে কোটা বাতিল চাই। যদি কোটা বাতিল না হয়, তাহলে আন্দোলন চলবে, কেউ ঘরে ফিরবে না। কারণ, এটা আমাদের ভবিষ্যৎ ও অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত।’

ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ফারিয়া সুলতানা বলেন, ‘২০১৮ সালে আমরা অধিকার ফিরে পেয়েছি অথচ আমাদের অধিকার আবার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তায় থাকব। আমাদের কোটার প্রয়োজন নেই। কোটা আমাদের দেশকে মেধাশূন্য করে দিচ্ছে। এটা শুধু আমাদের দাবি না, দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি। তাই অবিলম্বে কোটা বাতিল করা হোক।’

বরিশাল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বদা সজাগ। যানবাহন ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।