জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন সামনে রেখে এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রশিবিরের নেতারা উপস্থিত থাকা নিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে হট্টগোল হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে মতবিনিময় সভার শুরুতে পরিচয় পর্বের পর হট্টগোল শুরু হয়। পরে উপাচার্য অনুপস্থিত থাকার কারণ দেখিয়ে সভাটি স্থগিত ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ।
উপস্থিত ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা জানান, জাকসু নির্বাচন সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফায় ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা ছিল। সভার শুরুতে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা সাংগঠনিক পরিচয় দিয়ে কথা বলেন। সভায় ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পাঁচজন নেতা-কর্মীও পরিচয় দেন। ছাত্রদলের কর্মীদের পরিচয় পর্বের সময় ছাত্রদলের কর্মী মো. শরীফ সভায় শিবিরকে কেন রাখা হলো—এমন প্রশ্ন তোলেন। শিবির থাকলে কয়েকটি সংগঠন সভায় থাকবে না বলেও জানান তিনি। তখন অন্য সংগঠনগুলোর মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
একপর্যায়ে সভায় উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান অনুপস্থিত থাকার কথা উল্লেখ করে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) সোহেল আহমেদ সভাটি স্থগিত করেন। এ সময় বামপন্থী, ছাত্রদলসহ কয়েকটি সংগঠন মিলে শিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে মিছিল করতে করতে বের হয়ে যায়। একই সময় প্রগতিশীল সংগঠনগুলোকে ‘বাকশাল ও মুজিববাদের সহযোগী’ আখ্যা দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলন, জুলাই গণহত্যা বিচার নিশ্চিত আন্দোলন, গণ–অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনসহ অন্যান্য ব্যানারের নেতা-কর্মীরা বের হয়ে যান।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) সংগঠক সজিব আহমেদ বলেন, ‘জাবিতে কবির হত্যার ঘটনায় ২২টি ছাত্রসংগঠন মিলে ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তারা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত। আমরা কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে বসে আলোচনা করতে চাই না। তাই সভা বর্জন করেছি। কিন্তু আজকে আমাদের উদ্দেশে কয়েকটি ব্যানারের লোকজন বাকশাল ও মুজিববাদের সহযোগী বলে স্লোগান দিয়েছেন। আমরা তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা গত ১৬ বছর কোথায় ছিলেন? আমরা তো রাজপথে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শরণ এহসান বলেন, ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সঙ্গে সংস্কৃতিচর্চার চেতনাগত দূরত্ব রয়েছে। এত বছর আত্মগোপনে থেকে মাত্র তিনজনের কমিটি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করা কোনো সংগঠনের সঙ্গে আমরা সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো কিছুতেই সখ্যতায় যেতে পারি না। তা ছাড়া তাদের অতীত কার্যক্রমের কোনো জবাবদিহিও তারা করেনি। ফলে সংস্কৃতিকর্মীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিশ্বাস ও আস্থা-ভরসার জায়গা তৈরি না হওয়ায় তাদের ব্যাপারে আমাদের নতুন করে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন বলে মনে করছি।’
জানতে চাইলে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হারুনুর রশীদ বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক অধিকার নিয়মবহির্ভূতভাবে ফ্যাসিবাদী কায়দায় বিরত রাখার হীন চেষ্টাকে ফ্যাসিবাদের ধারাবাহিকতা বলেই মনে করি। সব বৈধ ছাত্রসংগঠনের কাছে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আচরণ এবং প্রশাসন আগের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ব্যর্থতা থেকে বের হয়ে আসবে বলে আশা করে ছাত্রশিবির।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিনির্মাণ। শিক্ষাঙ্গনেও থাকবে না কোনো দখলদারত্ব, কোনো প্রকার আইনের তোয়াক্কা না করে ফ্যাসিবাদী কায়দায় কোনো ছাত্রসংগঠনের অধিকারকে হরণ করে নেওয়া হবে না। প্রতিটি রাজনৈতিক সংগঠন তার মতামত প্রকাশের অধিকার পাবে, ছাত্র সংসদের বৈধ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক চর্চাকে সমুন্নত রাখবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সোহেল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, উপাচার্য অসুস্থতার কারণে আজকের সভায় উপস্থিত না থাকায় সভা মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তারিখ ঘোষণা করে আবারও বসা হবে।