আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্যাহকে পাকিস্তানের এজেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শিবচর উপজেলার চরজানাজাত ইউনিয়নে এক নির্বাচনী সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-চরভদ্রাসন-সদরপুর) আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরীর ভাই। নিক্সন চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টানা দুবার ফরিদপুর-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন। সেখানে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন কাজী জাফর উল্যাহ। যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নিক্সন চৌধুরী এবারও দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
সভায় ভোটার উদ্দেশে চিফ হুইপ বলেন, ‘আমি কখনো কারও এলাকার মধ্যে যাই না; কাউকে নিয়ে কথা বলি না। আমরা আমাদের শিবচরের উন্নয়ন করি, আমাদের কাজ করি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, একজন লোক, একজন নেতা, যাকে এখন সবাই হারু উল্যাহ (কাজী জাফর উল্যাহ) বলেন। তিনি হেলিকপ্টারে কইরা আইসা তাঁর এলাকার কথা বলেন না, শিবচরের কথা বলেন। শিবচরে এটা হয়েছে, শিবচরে সেটা হয়েছে। জানেনও না শিবচরে এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হয়েছে, এটাও মনে হয় তিনি জানেন না। তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন নির্বাচন করার জন্য, তিনিও নৌকার প্রার্থী, আমিও নৌকার প্রার্থী। তিনি নৌকার প্রার্থী হিসেবে আমার পক্ষে কথা বলবেন। কিন্তু উল্টো আমার বিপক্ষে কথা বলছেন, যাতে তিনি তো হারবেনই, সঙ্গে আমার ভোট নষ্ট করার চেষ্টা করছেন।’
নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, ‘ইউটিউবে দেখলাম, ভোটের জন্য এখন হাত জোড় করে ভিক্ষা চাচ্ছে, ক্ষমা চাচ্ছে। ভোটের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে কেন, ভিক্ষা চাইতে হবে কেন? আমি যদি কাজ করি, আমি যদি মানুষের বিপদে থাকি, আমি না আসলেও মানুষ আমাকে ভোট দেবে। কাজ করেন নাই, ফাঁকি দিয়েছেন, উন্নয়ন করেননি তাই এখন ভিক্ষা, দয়া ও ক্ষমা চাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘কথায়–কথায় বলেন তাঁর (জাফর উল্যাহ) বাবা এটা করেছে, ওটা করেছে। আরে বাবা তো করেছে, আপনিও তো এমপি ছিলেন, আপনার বউ তো এমপি ছিল, আপনি কী করেছেন? নিজের কথা কন। বাপের নামে চললেন তো কয়েকবার। এখন একটু নিজের পায়ে দাঁড়ান।’
নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, ‘পানি কাটলে কখনো দুই ভাগ হয় না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। আমার পিতা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন, মুজিব বাহিনীর কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। আমিও একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমিও ছোটবেলায় পরিবারের সঙ্গে ভারতে গিয়েছিলাম। উনি (কাজী জাফর উল্যাহ) কোথায় গিয়েছিলেন? ওনার ঠিকানাটি কোথায়? এটা একটু বলবেন।’
জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আরও বলেন, ‘এই হারু উল্যাহ হলেন পাকিস্তানের এজেন্ট। তাঁর বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকারই নাই। এই পাকিস্তানি এজেন্টরা যখনই সুযোগ পাবে, তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। তাই এই পাকিস্তানি এজেন্টদের আমাদের না বলতে হবে। তাঁদের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার রাখা যাবে না। একমাত্র স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি যদি ক্ষমতায় থাকে, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন, যার কারণে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে।’
এ সময় মাদারীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরী, শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম, শিবচর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফাহিমা আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।