দিয়াজ হত্যা মামলা

ছয় বছর তদন্তের পর পুলিশ বলছে ‘কেউ খুন করেনি’

দিয়াজ ইরফান চৌধুরী
দিয়াজ ইরফান চৌধুরী

চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ–সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলার ছয় বছর তদন্তের পর পুলিশ বলছে, কেউ খুন করেনি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালতে এই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। মামলাটি সর্বশেষ তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

তবে ছেলে হত্যার বিচার দাবিতে হাল ছাড়বেন না বলে জানান মামলার বাদী ও নিহতের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, পুলিশের দেওয়া এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন দেবেন। তিনি দাবি করেন, আইন অনুযায়ী মামলার তদন্তের ফলাফল বাদীকে জানাতে হয়। কিন্তু চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগে তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুস সালাম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তথ্যগত ভুল উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এর বেশি জানাতে চাননি তিনি।

২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় নিজের বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিন বাসায় দিয়াজ ছাড়া পরিবারের আর কেউ ছিলেন না। এর ২২ দিন আগে দিয়াজসহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চার নেতার বাসায় তাণ্ডব চালানো হয়। ৯৫ কোটি টাকার দরপত্রের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতির অনুসারী নেতা-কর্মীরা ওই হামলা চালান বলে অভিযোগ ওঠে। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যাওয়ার আগে দিয়াজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।

লাশ উদ্ধারের তিন দিন পর ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। অন্য আসামিরা হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু, সহসভাপতি আবদুল মালেক, মনসুর আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু তোরাব, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আরমান, প্রচার সম্পাদক রাশেদুল আলম, আপ্যায়ন সম্পাদক মিজানুর রহমান, সদস্য আরিফুল হক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জামশেদুল আলম চৌধুরী। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ক্যাসিনো-কাণ্ডে গ্রেপ্তার ঠিকাদার জি কে শামীমকে দিয়াজের পরিবারের পক্ষ থেকে আসামি করা হলে আদালত সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এর আগে মামলাটির তদন্ত করে হাটহাজারী থানা–পুলিশ। তিন বছরের তদন্তে তারাও কিছু বের করতে পারেনি।

দিয়াজের ময়নাতদন্ত নিয়েও জটিলতা দেখা দেয়। ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেওয়া প্রথম ময়নাতদন্তে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করেছিলেন চিকিৎসকেরা। পরিবার ও ছাত্রলীগের একাংশ (দিয়াজের অনুসারী) এটি প্রত্যাখ্যান করলে ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয়। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, দিয়াজকে শ্বাসরোধ করে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে।

আদালত সূত্র জানায়, আসামিদের মধ্যে শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর টিপু ও তাঁর ভাই মো. আরমান জামিনে আছেন। বাকি আসামিরা পলাতক।

চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক জাকের হোসাইন মাহমুদ আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, দিয়াজ হত্যা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন এসেছে। মামলার ধার্য দিনে এটি আদালতে উপস্থাপন করা হবে।