রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশের অনুমতি এখনো মেলেনি

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন রাজশাহী জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত
ছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশের অনুমতি এখনো মেলেনি। নগরের মাদ্রাসা মাঠে (হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ) গণসমাবেশের আয়োজন করতে চায় বিএনপি। তবে বর্তমানে ওই মাঠে তালা ঝুলিয়ে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মাঠে মঞ্চ নির্মাণের জন্য ডেকোরেটরের লোকজন গেলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আজ সোমবার জেলা ও নগর বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এসব দাবি করা হয়েছে।

আজ বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী নগরের মালোপাড়া বিএনপির কার্যালয়ে জেলা ও মহানগর বিএনপি যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত বলেন, ‘আজ পর্যন্ত আমাদের মাঠ দেওয়া হয়নি। মাদ্রাসা মাঠে পুলিশ তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমরা আবেদন করেছি, কিন্তু এখনো মাঠ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ ককটেলের নামে নতুন সন্ত্রাস তৈরি করছে। নয়টি উপজেলায় মামলা হয়েছে। সেই মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার–বাণিজ্য করছে।’

সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘রাজশাহী জেলার সব থানাতেই মামলা দেওয়া হয়েছে। সেই মামলাগুলোর নকল দেওয়া হচ্ছে না। আবেদন করার পরও সেটা পাচ্ছি না। বিদেশে থাকা নেতা–কর্মীদের নামেও মামলা হয়েছে। জেলার বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁদের নামেও মামলা হচ্ছে। তবে যত বাধাই আসুক, আমরা এই সমাবেশ করব।’

সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বিশ্বনাথ সরকার, মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদসহ অন্য নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সরেজমিনে মাদ্রাসা মাঠ

আজ বেলা দুইটার দিকে মাদ্রাসা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের প্রধান ফটক খোলা। মাঠের ভেতরের শামিয়ানা টানানোর জন্য চারপাশে বাঁশ দিয়ে কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি কাঠামো ভেঙে পড়েছে। এর মধ্যে একটি অটোরিকশায় ডেকোরেটরের লোকজনকে ফেস্টুন নিয়ে মাদ্রাসা মাঠে ঢোকার চেষ্টা করতে দেখা গেল। তবে অনুমতি নেই বলে ডেকোরেটরের লোকজনকে সেখান থেকে ফিরিয়ে দিলেন মাঠে টহলরত পুলিশ সদস্যরা।

ওই সময় মাঠে প্রায় ১০ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ সদস্য বলেন, অনুমতি না থাকায় মাঠে কাউকে মঞ্চ নির্মাণের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁরা ওই মাঠে কী দায়িত্ব পালন করছেন জানতে চাইলে পুলিশ সদস্য বলেন, তাঁরা আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখছেন, যেন সেখানে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয়।

বেলা দুইটার দিকে মাদ্রাসা মাঠে প্রায় ১০ জন পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে

বাঁশ দিয়ে কাঠামো কখন তৈরি করা হয়েছে জানতে চাইলে ওই পুলিশ সদস্য বলেন, বেশ কয়েক দিন আগে বিএনপির লোকজন কাঠামো তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এখনো তাঁরা মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পাননি। এ জন্য এখন তাঁদের আর কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে পুলিশের একজন উপকমিশনার প্রথম আলোকে বলেন, মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেবে জেলা প্রশাসন। সমাবেশ ও মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেয় পুলিশ। তাঁর জানামতে, বিএনপি এখনো মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পায়নি। আর সমাবেশের অনুমতির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। অন্য জায়গায় সমাবেশের দু–তিন দিন আগে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীতে এখনো পাঁচ দিন সময় আছে।

জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, মাঠ ব্যবহারের জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। তিনি শুনছেন যে বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এখনো সেটা হাতে পাননি। হয়তো ডাকফাইলে দিয়েছে। কিন্তু হাতে হাতে দেয়নি। তিনি আবেদনপত্রটি খুঁজছেন। আবেদনপত্র পেলে দেখবেন বিএনপি কী শর্তে মাঠটি চেয়েছে। তারপর সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। আর মাঠের অনুমতি পেলে পুলিশ কমিশনার সমাবেশের অনুমতি দিতে পারবেন।