ভারী বৃষ্টি হয়নি, তবে পানি ধীরে নামায় ভোগান্তি কমছে না

বন্যায় বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত, দুর্ভোগে রয়েছেন বাসিন্দারা। শুক্রবার দুপুরে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরপারের নীলপুর কান্দাহাটি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে গত দুই দিন ভারী বৃষ্টি হয়নি এবং একই সময়ে পাহাড়ি ঢল কম নামায় নদী ও হাওরে পানি কমছে। তবে হাওরে পানি কমছে ধীরে। এখনো অনেক বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে পানি আছে। এতে মানুষের ভোগান্তি কমছে না।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, আজ শুক্রবার বেলা তিনটায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৬৮ মিটারে, যা বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ৯৭ মিলিমিটার। এই সময়ে উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ৪৪ সেন্টিমিটার। দুই স্থানে বৃষ্টি কম হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যার পানিতে প্লাবিত থাকায় সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কে এখনো সরাসরি যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে পানি নেমে যাওয়ায় সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়ক দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তবে এখনো তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, সদর উপজেলার নিচু এলাকা মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটে পানি আছে। মানুষজন নৌকা নিয়ে চলাফেরা করছেন। এতে ভোগান্তি বেড়েছে।

সুনামগঞ্জের গ্রামীণ রাস্তাঘাটে এখনো বন্যার পানি থাকায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মানুষ। শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার দেখার হাওরপাড়ের নীলপুর কান্দাহাটি এলাকায়

সদর উপজেলার দেখার হাওরপাড়ের নীলপুর কান্দাহাটি গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ আলী (৪৬) জানান, তাঁদের এলাকার কিছু কিছু বাড়িঘরে এখনো পানি আছে। রাস্তাঘাট প্লাবিত থাকায় মানুষ ভোগান্তিতে আছেন।

একই গ্রামের শাহেদা বেগম (৫০) বলেন, ‘এক সপ্তাহ ইশকুলে আছলাম। ঢেউয়ে ঘরের বেড়া, মেঝে ভেঙে ফেলেছে। খাওয়ার কোনো উপায় নাই। ঘর ঠিক করতাম কিলা।’ একই হাওরপাড়ের সলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই পানি বাড়ে। গত দুই দিন বৃষ্টি কম হওয়ায় পানি টান ধরছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টি হওয়ায় পানি আবার বেড়েছে।’

সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা বলেন, হাওরের পানি নামছে ধীরে, মনে হয় আটকে আছে। গতকাল রাতেও পানি কিছুটা বেড়েছে। পানি বেশি দিন থাকা মানে বেশি ভোগান্তি। মানুষ আর কত সহ্য করবে। ঈদের দিন থেকে শুরু হয়েছিল। এখনো আছে।

সুনামগঞ্জে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি। শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার দেখার হাওরপাড়ের নীলপুর কান্দাহাটি এলাকায়

দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আবু হেনা আজিজ বলেন, এবার পানি নামার গতি কম। আগে বন্যা পানি দ্রুত নেমে যেত। এখন সেটা হয় না।

সুনামগঞ্জে গত ১৬ জুন থেকে বন্যা দেখা দেয়। একপর্যায়ে পুরো জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। প্লাবিত হয় জেলার ১ হাজার ১৮টি গ্রাম। ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। অসংখ্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়। মানুষের বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে আশ্রয় নেয় ২৫ হাজার পরিবার। ২৩ জুনের পর থেকে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে মানুষ বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেন। কিন্তু মানুষ স্বস্তি ফেলার আগেই আবার বন্যা পরিস্থিতি আবার অবনতি হয়ে যায়।

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলেই সমস্যা হয় বেশি। ঢল নামলে পানি বাড়ে। গতকাল রাতে তেমন বেশি বৃষ্টি হয়নি, উজানের ঢলও নেমেছে কম। তাই সুরমা নদী ও হাওরে পানি কমেছে। তবে ভারী বৃষ্টি হলে পানি আবার বাড়তে পারে।