ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় দুই নির্মাণশ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার ২৫ দিন পার হলেও এখনো অভিযুক্ত ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান ও সদস্য অজিত বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দুই জনপ্রতিনিধি আগুন লাগানোর জন্য শ্রমিকদের দায়ী করে স্বীকারোক্তি আদায় করতে কিল-ঘুষি ও চড়থাপ্পড় মারেন।
শাহ আসাদুজ্জামান ডুমাইন ইউনিয়নের ডুমাইন গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০১২ সালে প্রথমবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য হন। ২০২২ সালের ইউপি নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খোরশেদ আলমকে পরাজিত করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পুনরায় ইউপি চেয়ারম্যান হন। শ্রমিকদের পিটিয়ে হত্যার ঘটনার তিনটি ভিডিও ক্লিপ গত ২৩ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
মধুখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবং হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিউল আলম আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি অভিযান চালানো হয়েছে। তবে সফলতার মুখ আমরা দেখতে পারিনি। আমাদের বিশ্বাস, তিনি দেশেই আছেন। তাঁর কোনো পাসপোর্ট নেই। তা ছাড়া তিনি আত্মগোপন অবস্থায় কোনো মুঠোফোন ব্যবহার করছেন না।’ তিনি জানান, আসাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের জন্য দেশের সব থানায় বার্তা পাঠানো হয়েছে।
২০২৩ সালে দুই দফা ইউএনওর ওপর হামলার মামলা ও টিসিবির কার্ড আত্মসাতের ঘটনায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বরখাস্ত হন ডুমাইন ইউপির চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান। তবে দুবারই তিনি উচ্চ আদালতের মাধ্যমে পদ ফিরে পান। এসব ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছিল। এসব মামলার কোনোটিরই অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয়নি পুলিশ।
১৮ এপ্রিল রাতে পঞ্চপল্লী মন্দিরের প্রতিমার শাড়িতে আগুন দেওয়া এবং সন্দেহের বশে পাশের পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক নির্মাণে নিয়োজিত চার নির্মাণশ্রমিককে একটি কক্ষে আটকে পিটুনি দেওয়া হলে আশরাফুল ও আসাদুল নামের দুই সহোদর মারা যান। নির্মাণশ্রমিকদের পিটুনিতে ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান, সদস্য অজিত বিশ্বাস ও অমৃত কুমার বসু নামের এক গ্রাম পুলিশ সদস্যের সংশ্লিষ্টতা পায় তদন্ত কমিটি।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য ‘সর্প হয়ে দংশন করে ওঝা হয়ে ঝাড়া’র ভূমিকায় ছিলেন। তাঁদের নিখুঁত অভিনয় প্রথমে ধরা যায়নি।
পঞ্চপল্লীর ঘটনায় মধুখালী থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। দুই ছেলেকে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন নির্মাণশ্রমিকদের বাবা মো. শাহজাহান খান। মন্দিরের প্রতিমায় আগুন দেওয়ার ঘটনায় বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন ওই মন্দিরের পূজারি তপতী মণ্ডল। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন মধুখালী থানার উপপরিদর্শক শংকর বালা। প্রথম দুটি মামলায় সব অজ্ঞাত আসামি হলেও পুলিশের মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামানের নাম নেই।
মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন বলেন, ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে মামলাগুলো হওয়ায় তখন চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান সন্দেহের তালিকায় ছিলেন না। পরবর্তী সময়ে তদন্ত করে এবং ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজ দেখে ইউপি চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘আসাদুজ্জামান অত্যন্ত চতুর ব্যক্তি। তা ছাড়া ওই এলাকা মোবাইল প্রতারণার জন্য বিখ্যাত, সে কারণে তিনি মোবাইল টেকনোলজির ক্ষেত্রে দক্ষ। এ জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করতে বেগ পেতে হচ্ছে।’