পটুয়াখালীর বাউফলে দুই শিক্ষক মো. দেলোয়ার ও মো. জলিল মুন্সি হত্যা মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার ও তাঁর ছেলে জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহামুদ হাসানসহ অন্য আসামিদের বেকসুর খালাসের রায় বাতিল করে ফাঁসির দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে যুবদলের নেতা মনির হত্যার বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।
আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার বগা বন্দরে বিএনপির নেতা-কর্মী ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা মানববন্ধন করে এ দাবি জানান। মানববন্ধনের পর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বগা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. বাবুল মৃধা সভাপতিত্ব করেন। এতে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল গণি সিকদার, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম (জসিম), বগা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাবুল সিকদার, বগা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি মো. আনিস মৃধা প্রমুখ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার বলেন, যুবদলের নেতা মনিরের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি এবং তাঁর পরিবারের কেউ জড়িত ছিলেন না। পুলিশের একাধিক তদন্তে তা প্রমাণিত হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে আসামি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। ওই সময় পারিবারিক বিরোধের জেরে দিনের বেলা দেলোয়ার ও মো. জলিল মুন্সিকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলায় ষড়যন্ত্র করে তাঁকে ও তাঁর ছেলে মাহামুদ হাসানকে আসামি করা হয়েছিল। অথচ ঘটনার সময় তিনি এলাকায় ছিলেন না। এ কারণে আদালত সেই মামলায় তাঁদেরকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। ২৪ বছর আগের নিষ্পত্তি হওয়া পুরোনো ঘটনায় তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে হয়রানি করার জন্য একটি পক্ষ নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
তবে নিহত ব্যক্তিদের স্বজন, স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট বগা ইউনিয়নে বিএনপির পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে বগা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মো. মনির মৃধাকে (২৯) কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা হয়। ৯ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় মোতালেব হাওলাদার ও তাঁর ছেলে মাহামুদ হাসানসহ ১৮ জনকে আসামি করে নিহত মনিরের শ্যালক জাকির হোসেন হত্যা মামলা করেন।
পুলিশি তদন্তের পর আবদুল মোতালেব, তাঁর ছেলে মাহামুদ হাসানসহ ১৪ আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বাদী জাকির হোসেন ওই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দিলে আবার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি)। ডিবিও আবদুল মোতালেব, তাঁর ছেলে মাহামুদ হাসানসহ আটজনকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। দ্বিতীয় দফায় দাখিল করা ওই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আবার নারাজি দিলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত। মামলাটি এখনো তদন্তাধীন।
নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, ২০০১ সালের ৮ ডিসেম্বর জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হাতে উপজেলার মাধবপুর নিশিকান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন ও দুমকি জনতা কলেজের শিক্ষক আবদুল জলিল মুন্সি খুন হন। এই জোড়া খুনের ঘটনায় করা মামলায় মোতালেব হাওলাদার, তাঁর ছেলে মাহামুদ হাসানসহ ২৮ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় ২০০৪ সালে বরিশাল দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোতালেব হাওলাদার ও তাঁর ছেলেকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন। আসামিপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে ২০১৪ সালে মামলার সব আসামিদের বেকসুর খালাসের রায় দেন আদালত। পরে বাদী মজিবুর রহমান ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল আবেদন করলে তা খারিজ করে দেন বিচারক।