পাল্টে গেছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটের চেনা দৃশ্যপট। আগে প্রতিনিয়ত এ ঘাটে যানবাহনের জটলা থাকত। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কেও যানবাহনের লম্বা সারি দেখা যেত। ফেরির নাগাল পেতে অপেক্ষা করতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অথচ সেই ঘাট এখন ফাঁকা। বিশেষ করে পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহনের জটলা তো দূরের কথা, যানবাহনের সারিই তেমন চোখে পড়ে না।
আজ শুক্রবার সকালে দৌলতদিয়া ঘাট ঘুরে দেখা যায়, ঘাট এলাকার ঢাকা–খুলনা মহাসড়ক একদম ফাঁকা। কাউন্টারের সামনে নেই কোনো দালালদের তৎপরতা। গাড়ির চালক বা সহকারীদের হাঁকডাকও নেই। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় কাউন্টার পেরিয়ে ফেরি ও লঞ্চ ঘাটের অবস্থাও এক। ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাটে একাধিক ফেরি দেখা গেলেও গাড়ি না থাকায় ফেরিগুলো ঘাটেই অলস পড়ে আছে।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ঘাটে দুটি রো রো (বড়) ফেরি ভেড়ানো রয়েছে। এর মধ্যে একটি ফেরির কর্মচারীরা ফেরি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করছেন। আরেক ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানে ঘাটে দুটি প্রাইভেট কার নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে। এর মধ্যে ফেরি ছাড়তে দেরি দেখে ওই ফেরিতে থাকা গাড়ি দুটি একে একে নেমে অন্য ঘাটে গেল।
ফেরি থেকে নামার সময় একটি প্রাইভেট কারের চালক আবু সিয়াম বলেন, ‘কুষ্টিয়া থেকে খুব সকালে রওনা দিয়েছি। সাভারের নবীনগর যেতে হবে। ঘাটে ভেড়ানো ফেরিতে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে বসে আছি। কিন্তু মাত্র দুটি গাড়ি থাকায় ফেরি সহজে ছাড়ছে না। তাই ৬ নম্বর ঘাটে ভেড়ানো ছোট ফেরিতে যাচ্ছি। যদি ওই ফেরি দ্রুত ছাড়ে। এভাবে আর কতক্ষণ বসে থাকা যায়!’
ঘাট–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে প্রতিনিয়তি ঘাট এলাকাসহ মহাসড়ক ব্যস্ত ছিল। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর ঘাটে যানবাহনের চাপ প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। এর ওপর জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দুই দফায় ফেরির ভাড়া বৃদ্ধির কারণে যানবাহনের সংখ্যা আরও কমেছে।
ফেরিঘাট এলাকার মুদিদোকানি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এখন গাড়ি নেই বললেই চলে। দুপুরের পর কিছু মালবাহী গাড়ি আসে। এর আগে কখনই এ রকম দেখা যায়নি। সারা দিন গাড়ির চাপ না থাকায় আমাদেরও বেচাকেনা নেই।’
ঘাটে কর্তব্যরত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন দৌলতদিয়া কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর রাজু হাওলাদার বলেন, আগে ২৪ ঘণ্টায় শুধু দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার যানবাহন নদী পাড়ি দিত। এখন গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজারের মতো গাড়ি পার হয়।
ফেরিঘাট সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৬টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রায় ৬ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে ৫২টি পণ্যবাহী গাড়ি, ১৫০টি ছোট গাড়ি ও ৩২টির মতো যাত্রীবাহী পরিবহন পার হয়েছে। অথচ আগে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ যানবাহন পার হতো।