বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় এবং ভারতের উজান থেকে আসা পানির ঢল কিছুটা কমায় উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে তিস্তার পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় নদী অববাহিকায় রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন, উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়ন, গুনাইগাছ ইউনিয়ন ও বজরা ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বসতভিটা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। তিস্তার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীর পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কুড়িগ্রাম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আজ সোমবার সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল রোববার একই সময়ে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। এ ছাড়া জেলার অন্যান্য নদ-নদীগুলোর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৪ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে গত শনিবার রাত ৯টার দিকে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে তিস্তার বাঁ তীরে একটি বাঁধের ৩০ মিটার আরসিসি (রোলার কম্প্যাক্টেড কংক্রিট) অংশ ধসে নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে বুড়িরহাট বাঁধ এলাকার উজান ও ভাটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মামুনুর রশিদ বলেন, তিস্তার আরসিসি স্পার বাঁধের একাংশ ভেঙে যাওয়ার পর গতকাল মধ্যরাত থেকে বুড়িরহাট, রামহরি, খিতাবখা, বড় দরগা মাজারপাড়ায় ছয়টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তিস্তার স্পার বাঁধটি ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রক্ষাকবচের মতো ছিল।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল বাতেন বলেন, শনিবার রাতে স্পার বাঁধের একাংশ ভেঙে যাওয়ায় ভাটিতে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজারের বেশি পরিবার, মসজিদ, দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি ক্লিনিক ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। তিস্তার স্পার বাঁধের বাকি অংশ রক্ষা করতে না পারলে বাঁধ বিলীন হওয়ার সাত দিনের মাথায় বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন বিলীন হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
এদিকে উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ায় থেতরাই ইউনিয়নের জুয়ান সতরার চর, গোরাইপিয়ার, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দ, আনন্দবাজার, ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের রামনিয়াশা, উলিপুর বজরা ইউনিয়নের চর সাতানস্কর, দামারহাট এলাকার নিম্নাঞ্চলের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
চর খিতাব খাঁ গ্রামের বাসিন্দা ওসমান গণি বলেন, ‘পানি কমায় এল্যা ভালো আছি বাহে। কিন্তুক এই তিস্তার পানির তো ঠিক ঠিকানা নাই। এই বাড়ে তো এই কমে। ঝড়ি (বৃষ্টি) আসলেই পানি বাড়ে।’
পাউবোর শাখা কর্মকর্তা মো. মারজান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার তিস্তার পানির প্রবল স্রোতে আরসিসি বাঁধের অর্ধেক অংশ তিস্তার স্রোতে ডুবে বিলীন হয়। বাঁধের বাকি অংশের ভাঙন রোধ করার জন্য অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এই স্পার বাঁধ রক্ষা করতে পাউবো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।