ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার সন্দেহের জেরে হত্যা মামলার আসামি আখের উদ্দিনকে (৩৮) ডেকে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন তাঁর বন্ধু বাচ্চু মিয়া ওরফে কালা মানিক (৫৫)। বৃহস্পতিবার বগুড়ার সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট সুমাইয়া সিদ্দিকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বাচ্চু মিয়া এ কথা বলেন।
জবানবন্দির বরাত দিয়ে নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৫ সালে নন্দীগ্রামে ধর্ষণের পর হত্যা মামলা ছাড়াও শাজাহানপুর ও শিবগঞ্জ থানায় একাধিক ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাই মামলার আসামি বাচ্চু মিয়া। আখের তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের সন্দেহেই আখেরকে গলা কেটে হত্যা করার কথা বাচ্চু মিয়া আদালতে স্বীকার করেছেন।
বাচ্চু মিয়ার বাড়ি নন্দীগ্রাম উপজেলার কৈডালা গ্রামে। পুলিশ জানায়, বন্ধু আখেরকে হত্যার পর থেকেই আত্মগোপন করেন বাচ্চু। প্রথমে পঞ্চগড় সীমান্তপথে বিদেশে পালানোর চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে আত্মগোপন করেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বগুড়ার নন্দীগ্রাম থানা-পুলিশের একটি দল খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাচ্চু মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২২ আগস্ট নন্দীগ্রাম উপজেলার ওমরপুর সতীশ চন্দ্র কলেজ-সংলগ্ন একটি ধানখেত থেকে আখের উদ্দিনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত আখের উদ্দিন বগুড়া সদর উপজেলার চান্দপাড়া গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে। তিনি দুটি হত্যাসহ ডাকাতি, ছিনতাইয়ের একাধিক মামলার আসামি।
ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, লাশের পাশে একটি মোটরসাইকেল, হেলমেট ও একটি সচল মুঠোফোন পড়ে ছিল। পরিকল্পিতভাবে দুর্বৃত্তরা আখের উদ্দিনকে ডেকে এনে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ হয়। মুঠোফোনের সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এবং গোয়েন্দা তথ্যে নিশ্চিত হওয়া যায়, আখের উদ্দিন পেশাদার ছিনতাইকারী ও ডাকাত। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। ডাকাতি-ছিনতাইয়ের সূত্র ধরেই কারাগারে বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে পরিচয় ও বন্ধুত্ব তৈরি হয় আখের উদ্দিনের। কয়েক মাস আগে জামিনে বেরিয়ে আসেন আখের উদ্দিন। আর মাস দু-এক আগে জামিনে মুক্তি পান বাচ্চু মিয়া। এরপর দুজনে একসঙ্গে ডাকাতি-ছিনতাই করতে থাকেন। হত্যাকাণ্ডের রাতেও দুজন একসঙ্গে ছিলেন বলে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পর আখের হত্যায় বাচ্চু মিয়ার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সন্দেহ হয়।
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের পরপরই বাচ্চু মিয়া গা ঢাকা দেন। প্রথমে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেন। সেখানে পুলিশ অভিযানে গেলে টের পেয়ে পঞ্চগড় থেকে পালিয়ে খাগড়াছড়ি সদরের কমলছড়ি ইউপির দাতকুপিয়া পাহাড়িয়া গ্রামে আত্মগোপন করেন। নন্দীগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে সেখানে পুলিশ অভিযানে গেলে বাচ্চু মিয়া দাতকুপিয়া গ্রাম থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে কালাপাহাড় নামে টিলায় আত্মগোপন করেন। ১২ সেপ্টেম্বর ভোরে কালাপাহাড় থেকে বাচ্চু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে নন্দীগ্রাম নিয়ে আসা হয় এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি উদ্ধার করা হয়।