মাদারীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনার মিছিলে বোমা হামলা, আহত ১০

মাদারীপুরের কালকিনিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থকদের মিছিলে বোমা হামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুর-৩ (কালকিনি, ডাসার ও সদরের একাংশ) আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের মিছিলে মুহুর্মুহু বোমা হামলা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যানসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

তাহমিনা বেগমের সমর্থকেরা অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপের সমর্থকেরা তাঁদের মিছিল লক্ষ্য করে এই বোমা মেরেছেন।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কাজী তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে গেন্দু কাজী (৭০), গেন্দু কাজীর ছেলে মুরাদ কাজী (৩০), লক্ষ্মীপুর এলাকার আতিবর সরদারের স্ত্রী আখলিমা বেগম কহিনুর (৪৫), হাবিবুর রহমান সরদারের ছেলে কাঞ্চন সরদার (৫৫), মো. খোকন সরদারের ছেলে সোহেল সরদার (৪০), হাতেম সরদারের ছেলে ও ইয়াদুল সরদার (৪০)। বাকি চারজনের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। আবদুস সোবহান গোলাপ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে প্রথমবার সংসদ সদস্য হন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থকদের মিছিলে ‘নৌকা নৌকা’ বলে অতর্কিত কয়েকটি হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয়

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, আজ বিকেলে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে ঈগল প্রতীকের পক্ষে একটি বিশাল মিছিল বের করা হয়। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেনের নেতৃত্ব কয়েক শ লোক এই মিছিলে অংশ নেন। মিছিলটি লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের মৃধার মোড় থেকে হাবিবুর সরদারের বাড়ি পর্যন্ত গেলে নৌকার এজেন্ট ফজলুর হক বেপারীর লোকজন তাঁদের বাধা দেন। এ সময় ‘নৌকা নৌকা’ বলে মিছিলে অতর্কিত কয়েকটি হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি মাইকও ভাঙচুর করা হয়। হাতবোমায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল ও কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাতবোমা বিস্ফোরণে আহত তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই তিনজনের মধ্যে একজন চোখে এবং দুজন মাথায় ও পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন।

হামলায় আহত সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ কয়েকজন নৌকা নৌকা বলে আমাদের মিছিলে বোমা ছুড়তে থাকে। চারদিক ধোঁয়ায় ভরে গেলে আমরা মাটিতে পড়ে যাই। হামলায় আমার পা ও এক চোখে প্রচণ্ড ব্যথা পাই।’

হাতবোমায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে

তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন ফজলুর হক। তাঁর নির্দেশেই আমাদের মিছিলে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁরা এলাকায় সন্ত্রাসী রাজনীতি করেন। আমাদের নেতা-কর্মীদের ভয় দেখাতে এই হামলা চালানো হয়েছে। যাঁরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, আমি তাদের বিচার চাই।’

ফজলুর হক বেপারী লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান। তাঁর স্ত্রী মৌসুমী হক এই ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান। অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে ফজলুর হক ব্যাপারী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নৌকার প্রার্থীর প্রচারণায় রয়েছি। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মিছিলে আমরা কেন বাধা দেব? তারাই আমাদের নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। বোমা নিক্ষেপ করে। তাদের হামলায় আমাদের নেতা-কর্মীরাও আহত হয়েছে। আগে থেকে আমাদের কোনো নেতা-কর্মী কোথাও হামলা চালায়নি।’

কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বোমা বিস্ফোরণের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। হামলায় নৌকা ও ঈগল দুই পক্ষের লোকজনই আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আহত তিনজনের মধ্যে একজন চোখে এবং দুজন মাথায় ও পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন

মাদারীপুর-৩ আসনে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আবদুস সোবহান গোলাপ ও তাহমিনা বেগম ছাড়াও রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী প্রবীণ হালদার, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী নিতাই চক্রবর্তী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী নকুল কুমার বিশ্বাস, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আবদুল খালেক এবং জাকের পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন।