সংসার চালাতে অন্যের জমিতে কাজ করেছেন। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও চালিয়েছেন। কিন্তু সচ্ছলতার দেখা পাচ্ছিলেন না আনিসুল হক। একপর্যায়ে ব্যাংক কর্মকর্তার ফুলবাগান দেখাশোনার কাজ পান। সেখানে কাজ করতে করতে একদিন নিজেই গড়ে তোলেন বাণিজ্যিক ফুলের বাগান। এখন ফুল বিক্রি করে মাসে লাখ টাকার ওপরে আয় করছেন তিনি।
আনিসুল হকের বাড়ি রংপুর সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম গোপীনাথপুর এলাকায়। শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে একই এলাকায় তাঁর ফুলের বাগান। গতকাল সোমবার সকালে তাঁর ফুলের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, হলুদ গাঁদা ও সাদা রঙের চন্দ্রমল্লিকা ফুলে খেত ছেয়ে গেছে। দুটি পৃথক পৃথক গোলাপ ফুলের বাগানে সবুজ পাতার ভেতরে লাল গোলাপ শোভাবর্ধন করছে। সেই খেত থেকে গোলাপ ফুল তোলার সময় আনিসুল হকের সঙ্গে কথা হয়।
আনিসুল হকের বাবা আবদুল হাকিম পেশায় কৃষক। মা আলেয়া খাতুন গৃহিণী। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ভিটে ছাড়া পরিবারটির তেমন কোনো জমিজমা নেই। অভাবের সংসারে বেশি দূর পড়ালেখা হয়নি। এসএসসি পর্যন্ত পড়ে বড় সংসারের ঘানি টানতে তিনি রংপুর শহরে অটোরিকশা চালানো শুরু করেন। আনিসুল জানান, একটু একটু করে টাকা জমিয়ে কম দামে আটটি অটোরিকশাও কেনেন। কিন্তু এতে তাঁর মন বসে না। এরই মধ্যে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওই কর্মকর্তা তাঁদের বাড়ির পাশে জমি কিনে শৌখিন ফুলের বাগান করেন। সেখানে কাজ করতে করতে আনিসুল বাগানটি বর্গা নেন। অটোরিকশা চালানো বাদ দিয়ে সেই বাগানে ফুল চাষে ঝুঁকে পড়েন আনিসুল।
আনিসুল হক বলেন, ২০১৪ সালে ওই ব্যাংক কর্মকর্তার এক একর জমি বর্গা নিয়ে ফুলের বাগান করেন। ফুলের ব্যবসা ভালো হওয়ায় উপার্জিত টাকা দিয়ে এই জমির পাশে আরও এক একর জমি কেনেন। এখন দুই একরের ওপর তাঁর ফুলের বাগান।
বাগানে চন্দ্রমল্লিকা গাছ থেকে কাঁচি দিয়ে কেটে একটি একটি করে ফুল তুলে বস্তায় ভরতে দেখা গেল নবীন চন্দ্র রায়কে। তিনি বলেন, এই ফুল দিনাজপুরের পার্বতীপুর এলাকায় যাবে। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ছয় বছর ধরে তিনি এই বাগানে কাজ করছেন। আরও চারজন শ্রমিক নিয়মিত ফুলের বাগানে কাজ করেন।
১০ বছরে আনিসুলের ফুলের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর বাগানের রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্ল্যাডিওলাস ফুল কিনে নেন রংপুর, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, নীলফামারী, সৈয়দপুরের ফুল ব্যবসায়ীরা। আনিসুল হক বলেন, প্রতিদিন ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়ে থাকে বাগান থেকে। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ফুলের ব্যবসা আরও জমজমাট ছিল। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ৪ লাখ ৮০ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। আসন্ন ঈদে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হতে পারে বলে আশাবাদী তিনি।
ফুল চাষ করে সাফল্যের দেখা পেয়ে আনন্দিত আনিসুল হক। তিনি বলেন, ফুল বিক্রির উপার্জিত টাকায় পাঁচ বোনের বিয়ে দিয়েছেন। পৈতৃক ভিটার মধ্যে ওপরে টিন দিয়ে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বোনেরা বাড়িতে এলে যেন ভালোভাবে থাকতে পারেন, এ জন্য আটটি কক্ষ করেছেন। ছেলে রাফি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, আনিসুল হক ফুলের বাগান করে একজন সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন। ফুলের বাগান পরিচর্যাতেও কেউ কৃষি অফিসের সহায়তা চাইলে তা করা হয়ে থাকে।