মাদারীপুরে ঘরের দরজা ভেঙে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শহরের সবুজবাগ এলাকার একটি ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ওই দুই শিশুর নাম জান্নাতুল ফেরদাউস ও মেহেরাজ খান। এর মধ্যে মেহেরাজের বয়স এক বছর ও জান্নাতুলের বয়স দুই বছর এক মাস। এ ঘটনায় দুই শিশুর মা তাহমিনা তাবাচ্ছুমকে (২৬) আটক করেছে পুলিশ।
তাহমিনা তাবাচ্ছুম শরীয়তপুর সদর উপজেলার পশ্চিম সারেঙ্গা এলাকার সৌদিপ্রবাসী হালিম খানের স্ত্রী। তিনি একই উপজেলার টাউন চিকনদি এলাকার তারা মিয়া সরদারের মেয়ে। তারা মিয়া কাজের জন্য মাদারীপুর শহরের সবুজবাগ এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাহমিনা কিছুটা অসুস্থ থাকায় কয়েক মাস ধরে তিনি দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকতেন।
থানা-পুলিশ, স্বজন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলো জানা যায়, প্রায় সাত বছর আগে তাহমিনার বিয়ে হয়। তিন বছর আগে হালিম-তাহমিনা দম্পতির মেয়ে হয়। এর পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়। যৌতুকের দাবিতেও হালিম তাঁর স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন। এক বছর আগে তাঁদের ছেলে হয়। এর পর থেকে তাঁর স্বামীর সঙ্গে আরও ঝামেলা বাড়ে। তখন থেকেই তাহমিনা বাবার বাড়িতে থাকতেন।
তাহমিনার স্বজনেরা বলেন, আজ দুপুরে তাহমিনা তাবাচ্ছুম দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁর কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন। পরে তাহমিনার মা নারগিস বেগম একাধিকবার ডাকাডাকি করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। বিষয়টি সন্দেহ হলে নারগিস বেগম তাঁর ছেলে সোহেল সরদারকে ফোনে বিষয়টি জানান। বেলা সাড়ে তিনটায় বাড়ি ফেরেন তিনি। পরে তিনি নানা চেষ্টা করে বোনের কক্ষে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন। পরে সোহেল পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯ কল করে বিষয়টি পুলিশকে জানান।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মাদারীপুর সদর মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে ওই কক্ষের শয্যা থেকে তাহমিনার দুই শিশুকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় ওই কক্ষের ভেতরেই ছিলেন তাহমিনা।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আলাউল হাসান বলেন, পুলিশ যখন দরজা ভেঙে কক্ষে প্রবেশ করে তখন দেখা যায়, মা তাঁর মৃত দুই সন্তানকে নিয়ে খাটের ওপর বসে আছেন। পরে মাকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। ওই দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শফিউর রহমানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা।
নিহত দুই শিশুর নানা তারা মিয়া সরদার বলেন, তাহমিনা অনেক দিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁকে চিকিৎসাও করানো হয়েছে। তবে এ ঘটনা তাঁরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।
এদিকে দুই শিশুর মৃত্যুর খবরে ওই বাড়িতে শত শত মানুষ ভিড় করেন। তাহমিনার মা নারগিস বেগম আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘বেলা একটা অবদি বাচ্চাদের সাড়া ছিল। পরে ঘর না খোলায় সন্দেহ হলে ছেলেকে ফোন করি। পরে দেখি আমার দুই নাতি আর নাই। হায় আল্লাহ, আমার ফুলের মতো দুইডা নাতি–নাতনিরে তুমি এইভাবে কাইড়া নিলা।’