রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় শুধু উদ্বেগ জানাল প্রশাসন, গঠন হয়নি তদন্ত কমিটি

সংঘর্ষ শুরুর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারীরা এসে হল গেটে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। গত শনিবার রাতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার ইতিমধ্যে ৪০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। তবে ঘটনা তদন্তে এখন পর্যন্ত কোনো কমিটি গঠন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিংবা হল প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শুধু গভীর উদ্বেগ জানানো হয়েছে। আর হল প্রশাসন বলছে, তারা আগামীকাল মঙ্গলবার এ ব্যাপারে আলোচনায় বসবে। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ওই ঘটনায় হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। সেসব বিষয়ে তাঁরা আগামীকাল সভা করবেন। সেখানে সার্বিক বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত শনিবার রাত ১১টা থেকে দিবাগত রাত আড়াইটা পর্যন্ত ছাত্রলীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় দফায় দফায় রামদা ও লাঠিসোঁটা হাতে একে অপরকে ধাওয়া দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল গেট ও মাদার বখ্শ হলের মধ্যবর্তী স্থানে দুই পক্ষ অবস্থান নিয়ে এ হামলা চালায়।

সংঘর্ষে জড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান এবং শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদের পক্ষ। তবে সংঘর্ষ চলাকালে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারীদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হয়ে হামলা চালাতে দেখা গেছে।

আবাসিক হল ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, অতিথি কক্ষে বসাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনাকে অপ্রীতিকর উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিবদমান শিক্ষার্থীদের সংযত থাকতে ও পরস্পরের মধ্যে সদ্ভাব প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে হল প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈঠক করে। ওই বৈঠকে এ আহ্বান জানান সবাই।

আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও অধ্যাপক মো. হুমায়ূন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অবায়দুর রহমান প্রামাণিক, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক তারিকুল হাসান, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এ বৈঠকের সিদ্ধান্ত বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডে স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে শনিবার রাতে দুই পক্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে হল প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আলোচনা হয়। সেখানে পরিস্থিতি নিরসনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিবদমান শিক্ষার্থীদের সংযত থাকা ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে সদ্ভাব প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। একই সঙ্গে হল প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধি করতে বলা হয়। এ ছাড়া যেকোনো পরিস্থিতিতে হল প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গতকাল রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বিবদমান শিক্ষার্থীদের বৈঠক হয়। তাঁদেরকে আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাসে শান্তি–শৃঙ্খলা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা সে বিষয়ে সচেতন থাকাসহ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।