মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে ৯ মাস শৌচাগারে আটকে রেখেছিল পরিবার। অবশেষে সোমবার পুলিশের সহায়তায় মুক্ত করা হয় ওই যুবককে। গতকাল সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাশিপাড়ায়
মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে ৯ মাস শৌচাগারে আটকে রেখেছিল পরিবার। অবশেষে সোমবার পুলিশের সহায়তায় মুক্ত করা হয় ওই যুবককে। গতকাল সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাশিপাড়ায়

শৌচাগার থেকে আসত গোঙানির শব্দ, ৯ মাস বন্দী ছিলেন ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ যুবক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় শৌচাগারে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে আটকে রাখা সুজিত দাস (৩৩) নামের এক যুবককে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার বেলা তিনটার দিকে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা এই যুবককে উদ্ধার করেন।

উদ্ধার হওয়া যুবক সুজিত দাস উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাশিপাড়ার মৃত নরেন্দ্র দাসের ছেলে। পেশায় তিনি জেলে ছিলেন। সুজিত মানসিক ভারসাম্যহীন বলে পরিবার জানিয়েছে।

সুজিতের পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৯-১০ বছর আগে সুজিতের বিয়ে হয়। এর পর থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি। ২০১৮ সালে ধস্তাধস্তি থেকে সুজিতের ছুরিকাঘাতে তাঁর চাচা মতি লাল দাসের (৫০) মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় তাঁর চাচি সুমিত্রা রানী হত্যা মামলা করেন। হত্যার পরপর গ্রেপ্তার হলে পৌনে চার বছর জেলা কারাগারে ছিলেন সুজিত। ২০২২ সালের শেষ দিক জেল থেকে ছাড়া পান তিনি। মা আরতী রানী ও একমাত্র বড় ভাই অনিল দাস পাঁচ থেকে ছয় মাস বিভিন্ন জায়গায় তাঁর চিকিৎসা করান। কিন্তু কোনোভাবেই সুজিতকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না তাঁরা।

স্থানীয় লোকজন জানান, একপর্যায়ে প্রায় ৯ মাস আগে বাড়ির বসতঘরের সামনে একটি শৌচাগার এবং শৌচাগারের পাশে একটি ছোট ঘর নির্মাণ করে সেখানে সুজিতকে আটকে তালাবদ্ধ করে দেয় পরিবার। শৌচাগারের পাশের কক্ষের দরজার নিচের একটি অংশ দিয়ে সুজিতের সঙ্গে পরিবারের লোকজন কথাবার্তা বলতেন এবং তাঁকে তিন বেলা খাবার দিতেন। সম্প্রতি স্থানীয় লোকজন বিষয়টি নাসিরনগর থানার ওসিকে জানান। এরপর সোমবার বেলা তিনটার দিকে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে কাশিপাড়ায় যান ওসি। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে শৌচাগারের তালা খুলে সুজিতকে বন্দীদশা থেকে বাইরের আলোতে নিয়ে আসেন তাঁরা। পরে তাঁকে গোসল করানো হয়। উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে সুজিতকে পরিবারের জিম্মায় রাখে নাসিরনগর থানা-পুলিশ।

শৌচাগারের পাশের কক্ষের দরজার নিচের একটি অংশ দিয়ে সুজিতের সঙ্গে পরিবারের লোকজন কথাবার্তা বলতেন এবং তাঁকে তিনবেলা খাবার দিতেন

সুজিতের মা আরতি রানী বলেন, সুজিত মানসিক ভারসাম্যহীন। যেকোনো সময় যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটাতে পারেন। তাই নিরুপায় হয়ে তাঁকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। এর বিকল্প কোনো উপায় তাঁদের ছিল না।

সুজিতের বড় ভাই অনিল দাস বলেন, ‘পৌনে চার বছর জেলা কারাগারে ছিল আমার ভাই। পাঁচ থেকে ছয় মাস বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করানো হলেও তাঁর কোনো উন্নতি হয়নি। বাধ্য হয়ে তাঁকে আটকে রাখতে হয়েছে। বন্দীদশা থেকে বের হয়ে কাউকে যদি খুন করে, তাহলে তাঁর দায়িত্ব কে নেবে এখন?’

নাসিরনগর থানার ওসি মো. সোহাগ রানা প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, শৌচাগারে ওই যুবককে ৯ মাস বন্দী করে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সেখান থেকে ভেসে আসা তাঁর গোঙানির শব্দ শুনতেন স্থানীয় লোকজন। পরে ঘটনাটি শুনে অমানবিক মনে হয়েছে। সে জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে শৌচাগারের তালা খুলে ওই যুবককে মুক্ত করা হয়েছে। সুজিতকে জেলার প্রত্যাশা পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান ওসি।