যশোরে যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা, একই গ্রামের দুজন গ্রেপ্তার
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার যুবলীগ নেতা উদয় শংকর বিশ্বাস হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে নিহত ব্যক্তির মা ছবি রানী বিশ্বাস বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উপজেলার পাঁচাকড়ি টেকারঘাট বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন, বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে তিনজনকে নিয়োগ এবং স্থানীয় একটি মাছের ঘের নিয়ে সৃষ্ট বিরোধে তাঁর ছেলে উদয় শংকর বিশ্বাসকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে বাদী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। তবে তাঁদের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। আসামিদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মো. মনিরুজ্জামান। তাঁরা হলেন উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের পাঁচাকড়ি গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাস (৪৫) ও উত্তম দাস (৩৪)। আজ ভোরে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মনিরামপুর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের পাঁচাকড়ি গ্রামের বৈকালী এলাকায় স্থানীয় বাজার থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা উদয় শংকর বিশ্বাসকে (৪৩) গুলি করে হত্যা করে। উদয় শংকর পাঁচাকড়ি গ্রামের রণজিৎ বিশ্বাস ও ছবি রানী বিশ্বাসের ছেলে। তিনি উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া নেহালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সংস্কৃত বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক এবং পাঁচাকড়ি টেকারঘাট বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন। পাঁচাকড়ি গ্রামের বৈকালী সর্বজনীন পূজা মণ্ডপের সভাপতিও ছিলেন উদয় শংকর।
উদয় শংকর বিশ্বাসের চাচা সুজন বিশ্বাস বলেন, সোমবার সকালে উদয় শংকর বিশ্বাস বাজার করতে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে টেকারঘাট বাজারে যান। বাজার শেষে মোটরসাইকেলে করে তিনি নওয়াপাড়া-কালীবাড়ি সড়ক দিয়ে পাঁচাকড়ি গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তিনি বাড়ির সামনে বৈকালী এলাকায় পৌঁছান। সেখান থেকে কাঁচা রাস্তা দিয়ে বাড়িতে ঢোকার সময় আগে থেকে সেখানে অবস্থান নেওয়া দুই দুর্বৃত্ত তাঁকে পেছন দিক থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে তিনি রাস্তার ওপর পড়ে যান। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান।
পাঁচাকড়ি গ্রামের বৈকালী এলাকার চায়ের দোকানি দশরথ মণ্ডল বলেন, সোমবার দুই ব্যক্তি একটি মোটরসাইকেলে করে এসে দোকানে বসেন। তাঁরা দুজনে দুই কাপ চান খান। চায়ের দাম দিয়ে তাঁরা দোকানের আশপাশে ঘোরাঘুরি করেন। এরপর তাঁরা বাসুদেব চক্রবর্তী চায়ের দোকানের দিকে চলে যান।
চায়ের দোকানি বাসুদেব চক্রবর্তী বলেন, সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে মোটরসাইকেলে করে দুই ব্যক্তি বৈকালী এলাকায় তাঁর দোকানের সামনে এসে থামেন। তাঁদের একজনের মাথায় হেলমেট ছিল, অপরজনের মাথায় ছিল না। তাঁরা দোকান থেকে দুটো সিগারেট কিনে চলে যান। এর খানিকটা পর সাইকেলের চাকা বিস্ফোরণের মতো একটি শব্দ হয়। শব্দ শুনে তাঁরা সেখানে দৌড়ে যেতে যেতে ওই দুই ব্যক্তি মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যান। এরপর বাড়িতে ঢোকার মুখে পুকুরপাড়ে সড়কের পাশে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদয় শংকর বিশ্বাসকে পড়ে থাকতে দেখেন।
মনিরামপুর থানার ওসি শেখ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, উদয় শংকর বিশ্বাস হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।