ঈদের দিন যখন যখন সবাই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ব্যস্ত, তখন শহরের ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। সোমবার বিকেলে ফরিদপুর শহরের আলীপুরে
ঈদের দিন যখন যখন সবাই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ব্যস্ত, তখন শহরের ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। সোমবার বিকেলে ফরিদপুর শহরের আলীপুরে

পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঈদ

মানুষের জন্য শহর পরিষ্কার রাখার মধ্যেই ঈদের আনন্দ

পবিত্র ঈদুল আজহায় যখন কোরবানির গোশত নিয়ে সবাই ঈদের আনন্দে মশগুল, তখন সড়ক থেকে ময়লা-আবর্জনা সরাতে ব্যস্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।

ঈদের দিন আনন্দের সময় এমন কাজ করতে কেমন লাগে—জিজ্ঞাসা করতেই পরিচ্ছন্নতাকর্মী সোহাগ শেখ বললেন, ‘শহর পরিষ্কার রাখাই তো আমাগো কাজ। আমরা এই কাজ না করলে ময়লা-আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়াবে। শহর দূষিত হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে পারার মধ্যেই আমাদের ঈদের আনন্দ।’

সোহাগ শেখ (২৬) ফরিদপুর পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী। মা–বাবা ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন শহরের স্টেশন কলোনিতে। ঈদের দিন দুপুরে শহরের ঝিলটুলী মহল্লায় সড়ক পরিষ্কারের সময় তিনি ওই মন্তব্য করেন। একই কলোনিতে থাকেন রাজু শেখ (৪৭) নামের আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী। গতকাল সোমবার সকালে শহরের চানমারী ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ পড়েছেন।

রাজু শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই কাজে আনন্দ পাই। রাস্তাঘাট পরিষ্কার থাকলে সবাই নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারেন। আমাদের জন্য সবাই শান্তি ও স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারছেন, নাকে রুমাল গুঁজে চলতে হচ্ছে না, এটা ভেবেই ঈদের আনন্দ অনুভব করি।’

তবে ঈদের দিনের কাজ করা নিয়ে সব পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ভাষ্য একই ধরনের না। অনেকের মধ্যে এই কাজ করার ক্ষেত্রে ভিন্নমতও পোষণ করেন। ফরিদপুর পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও শহরের কমলাপুর মহল্লার বাসিন্দা শাহ আলম (৩৩) তাঁদেরই একজন।

জানতে চাইলে শাহ আলম বলেন, ‘গরিব মানুষ। লেখাপড়া করিনি। পৌরসভায় চাকরি করি। ঈদের দিন আমাদের অন্য কর্মীরা এ কাজ করেন। তাই আমাকেও করতে হয়। মনে সায় না দিলেও বা ভালো না লাগলেও ভালো লাগাতে হয়। শহর পরিষ্কার থাকুক, আমিও চাই। এই কাজ তো কাউকে না কাউকে কাউকে করতে হবে।’

মানুষকে পরিচ্ছন্ন শহর উপহার দিতে কাজ করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। সোমবার বিকেলে ফরিদপুর শহরের মাইটা গোরস্থান এলাকায়

ফরিদপুর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পৌরবাসীর কোরবানি শেষ হওয়ার পর বেলা আড়াইটার পর থেকে পৌরসভার উদ্যোগে ১২টি ট্রাক নিয়ে ২৭টি ওয়ার্ডের আবর্জনা পরিষ্কার করতে নামে ১২টি দল। প্রতিটি দলে একজন সুপারভাইজার, একজন গাড়িচালক ও পাঁচজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী আছেন। একেকটি দলের দুটি করে ওয়ার্ড পরিষ্কার করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ছোট ছোট ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা ২৭টির বাকি তিনটি ওয়ার্ডেও কাজ করেন।

পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের একজন সুপারভাইজার মো. রেজোয়ান (৩৮) প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের দিনে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত তাঁদের এই কাজ করতে হয়। তাঁরা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। এ জন্য দুপুরের সময় পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারেননি। এ নিয়ে মনে কোনো খেদ কাজ করে না। রাতে বাড়িতে ফিরে পরিবারকে সময় দিতে পারেন। দেশে সেবামূলক আরও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দিনের পর দিন পরিবারকে সময় দিতে পারেন না। এমনকি ঈদেও যেতে পারেন না। সেই দিক থেকে তাঁরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেন।

ফরিদপুর পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক বিকাশ দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, কোরবানির পর বর্জ্য, রক্তসহ গবাদিপশুর উচ্ছিষ্ট সড়ক ও অলিগলিতে ফেলে রাখা হয়। পৌরসভার পক্ষ থেকে ঈদের দিন দুপুরে সবার কোরবানি শেষ হওয়ার পর বর্জ্য অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঈদের দিনের এই কাজের জন্য প্রত্যেক পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে ৫০০ এবং গাড়িচালক ও সুপারভাইজারকে ৭০০ টাকা বকশিশ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, শহর সুন্দর থাকুক। আমরা শহর পরিষ্কার রাখি বলে সব শ্রেণির মানুষ তা উপভোগ করেন। এটাতেই আমাদের আনন্দ।’