নিহত আবু জাফর
নিহত আবু জাফর

কর্মস্থলে যাওয়ার পথে গুলিতে নিহত হন বাসচালক আবু জাফর

‘আমার ছোট ভাই বাসের চালক ছিল। কর্মস্থলে হেঁটে যাওয়ার পথে গুলিতে নিহত হলো। তার তো কোনো অপরাধ ছিল না।’ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে রাজধানীর গোলাপবাগ এলাকায় গুলিতে নিহত বাসচালক আবু জাফর ওরফে বাদশার (৪৯) বিষয়ে এভাবে বলছিলেন তাঁর ভাই বেলায়েত হাওলাদার।

জাফরের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ছোট মাছুয়া গ্রামে। গতকাল রোববার তাঁর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। পরিবারের ছোট ছেলে আবু জাফর বাবার বাড়িতে স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতেন। শ্যামলী পরিবহনের চালক ছিলেন তিনি। ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর গোলাপবাগে আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত হন। ১৯ জুলাই রাতে গ্রামের বাড়িতে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

গতকাল দুপুরে জাফরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের ভেতরে বৃদ্ধা মা সেতারা বেগম ছেলে হারানোর শোকে কান্নাকাটি করছেন। আর স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে শোকে পাথর হয়ে আছেন হাসিনা বেগম। স্বজনেরা জানান, আবু জাফরের আয়েই সংসার চলত। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বসতবাড়িটি ছাড়া তাঁদের আর কোনো সম্পদও নেই।

জাফরের পরিবারের সদস্যদের দাবি, ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় শ্যামলী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ে মঠবাড়িয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। পরদিন বিকেলে তাঁকে ফোন করে বাস কাউন্টারে যেতে বলেন পরিবহনটির কর্মকর্তারা। ফোন পেয়ে ওই দিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঢাকার বাসা থেকে বের হয়ে হেঁটে কর্মস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। পরে রাজধানীর গোলাপবাগ এলাকায় পৌঁছার পর পুলিশের ছোড়া গুলি এসে তাঁর গলা ও বুকে বিদ্ধ হয়। এতে তিনি ঘটনাস্থলে সড়কের ওপর লুটিয়ে পড়েন। আশপাশের পথচারীরা উদ্ধার করে মুগদা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পথচারী এক নারীর কাছ থেকে মুঠোফোনে জাফরের মৃত্যুর খবর পান তাঁরা।

‘আমার স্বামীর অপরাধ কী? কেন পুলিশের গুলিতে তাঁর মরতে হলো?’ ক্ষোভ নিয়েই কথাগুলো বলছিলেন জাফরের স্ত্রী হাসিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে পড়াশোনা শেষ করে বেকার। মেজ ছেলে কেরানীগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় এবং ছোট ছেলে স্থানীয় বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তাঁর মৃত্যুতে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমাদের বসতবাড়ি ছাড়া আর কোনো সম্পদও নেই।’

জাফরের বড় ছেলে শাওন হাওলাদার বলেন, ‘আমার বাবা প্রথম জীবনে রিকশা চালাতেন। এরপর বাসের চালকের সহকারী এবং পরে বাসচালক হয়েছেন। বাবার আয়েই সংসার চলত। তাঁর মৃত্যুর পর পরিবারের আয়রোজগার বন্ধ। চাচাদের দেওয়া খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে দাফন–কাফনের জন্য ১০ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছি।’

বাবার স্মৃতি হাতড়ে ছোট ছেলে নাঈম হাওলাদার বলেন, ‘আব্বা ঢাকা থেকে বাড়ি এলে আম নিয়ে আসতেন। আমার জন্য চিপস আর দাদির জন্য পানও নিয়ে আসতেন। আমরা প্রতিদিন আম–দুধ খেতাম। আব্বার মৃত্যুর পর আর আম খাওয়া হয়নি।’