ব্যবসায়ী সেলিম শেখের মুরগির খামারের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন স্থানীয় চার তরুণ। সেখান থেকে মুরগির খাবার চুরির অভিযোগে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছিল কাজ থেকে, যা নিয়ে সেলিমের সঙ্গে তাঁদের কথা–কাটাকাটিও হয়। সেই ক্ষোভ থেকেই রাতের আঁধারে সেলিমের স্ত্রী ও দুই ছেলেকে ধারালো ছুরি ও বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন তাঁরা।
গতকাল বুধবার রাতে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের সাতখামার-কুরুলিয়া এলাকায় মা ও দুই ছেলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা। বিকেলে নিজ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার নবীন ইসলাম জাহিদের (২৫) স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ সুপার এ দাবি করেন। এমনকি হত্যাকাণ্ডের সময় বাম হাত কেটে যাওয়ায় ঘটনার পরপরই নবীন প্রথমে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান পুলিশ সুপার।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, হত্যাকারী চারজনের একটি দল মাদক সেবনের পর গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে ব্যবসায়ী সেলিম শেখের বাড়িতে ঢোকে। তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল বাড়ির মালামাল লুটপাট করা এবং সেলিম শেখকে হত্যা করা। বাড়িতে ঢুকে তাঁরা সেলিম শেখকে না পেয়ে প্রথম তাঁর ছোট ছেলে সায়হাম শেখকে (৮) কুপিয়ে হত্যা করেন। এ সময় শিশুটির মা তাসলিমা আক্তার (৩৫) এগিয়ে এলে তাঁকেও কুপিয়ে ঘরের মেঝেতে ফেলে রাখেন। সবশেষে বড় ছেলে সৈকত শেখকে (১২) কুপিয়ে হত্যা করে তাঁরা চলে যান।
পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, রাত ১১টার পর সেলিম শেখ বোদা বাজারে তাঁর কাপড়ের দোকান বন্ধ করে বাড়িতে ফিরে ঘরের দরজা খোলা দেখেন। পরে তিনি বাড়ির ভেতরে গিয়ে ঘরের মেঝেতে তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করেন। তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর মাধ্যমে পুলিশকে খবর দেয়। পাশাপাশি স্থানীয় সেনা ক্যাম্পেও খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে সিআইডির সদস্যরাও ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করেন। পরে লাশ তিনটির সুরতহাল শেষে আজ ভোরে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এরই মধ্যে ঘটনার তদন্তে নেমে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ কুরুলিয়া এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নবীন ইসলামকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরে একটি বাঁশঝাড় থেকে একটি ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আজ সকালে সেলিম শেখ বাদী হয়ে আটোয়ারী থানায় চারজনের নামে একটি হত্যা মামলা করেন।
এদিকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মামলার এজাহারনামীয় অপর আসামি রিমন ইসলামকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে বিকেলে নবীন ইসলামকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তার রিমন ইসলামকে আদালতে হাজির করার প্রক্রিয়া চলছে পুলিশ জানিয়েছে।