চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল ওদুদ ও বিএনএম প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল মতিন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল ওদুদ ও বিএনএম প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল মতিন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন

বিএনএম প্রার্থীর পক্ষ থেকে ‘সরে দাঁড়াল’ আওয়ামী লীগের একাংশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে দলীয় প্রার্থীকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল মতিনকে সমর্থন জানিয়ে আসছিলেন আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা। শেষ মুহূর্তে এসে প্রকাশ্য সেই সমর্থন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বিএনএম প্রার্থীকে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।

এতে সদর আসনের নির্বাচনে নতুন মোড় নিয়েছে। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলামের কথায়, এতে করে আবদুল মতিনের সমর্থক শিবিরে হতাশা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ শিবিরে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ। নির্বাচনে আবদুল ওদুদের বিরোধীপক্ষ হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা নৌকা ঠেকাতে প্রচারণার শুরু থেকেই বিএনএম প্রার্থীর পক্ষে নামেন। নেতৃত্বে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রুহুল আমীন, গোলাম রাব্বানী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক তাজিবুর রহমান, সদর উপজেলা সভাপতি আজিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, পৌর সভাপতি আবদুল জলিল, সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান, চরবাগডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ রানা।

বিএনএম প্রার্থী আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার রাতে মোখলেসুর রহমান গাড়ি পাঠিয়ে ডেকে নিয়ে সমর্থন প্রত্যাহার করার কথা জানিয়েছেন। নৌকার লোকজন নোঙ্গরের কর্মী-সমর্থকদের এত হুমকি, মারধর করার পরও কোনো প্রতিকার না পেয়ে তিনি (মোখলেসুর রহমান) হতাশ হয়ে আর সমর্থন করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।

এদিকে মোখলেসুর রহমান নীরব হয়ে যাওয়ায় এ অংশের অন্য নেতাদের আর প্রকাশ্যে আবদুল মতিনের পক্ষে প্রচার প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যায়নি। সহসভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। মোখলেসুর রহমান, শরিফুল আলম ও আবদুল জলিলকে একাধিকবার ফোন করা হলে তাঁরা ধরেননি।

জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সরাসরি কোনো প্রচারণায় অংশ নিইনি এবং নোঙ্গর মার্কায় কাউকে ভোট দিতেও বলিনি, যা হয়েছে ওপরের নির্দেশেই হয়েছে।’

আবদুল মতিনকে ডেকে নেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল ওদুদ বলেন, ‘মোখলেসুর রহমান আবদুল মতিনকে ডেকে আটকে রেখে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে বা গুম করে তাঁর দায় আমার বা আমার নেতা-কর্মীদের ওপর চাপিয়ে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করেছিল। পরে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আবদুল মতিনকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেন।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৯ এপ্রিল প্রকাশ্যে দিনের বেলায় যুবলীগের সাবেক নেতা ও আবদুল ওদুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী খায়রুল আলম ওরফে জেমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। খায়রুল আলম জেম হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি হলেন মোখলেসুর রহমান ও অন্যতম আসামি শহীদ রানা। আসামি হিসেবে মোখলেসুর রহমান প্রায় চার মাস হাজতবাস করার পর উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্ত হন। মোখলেসুর রহমানের অভিযোগ, অন্যায়ভাবে আবদুল ওদুদ তাঁকে হত্যা মামলায় জড়িয়েছেন। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল ওদুদ বলে আসছেন, মোখলেসুরের নির্দেশেই খায়রুল আলমের ওপর হামলা করা হয়।