পদ্মায় দুর্বৃত্তদের হামলা

নদীতে ঝাঁপ দেওয়া দুই পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে একজনের লাশ উদ্ধার

কুষ্টিয়ায় পদ্মায় নিখোজ পুলিশ কর্মকর্তা সদরুলের বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েন। শিলাইদহ খেয়াঘাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পদ্মা নদীতে নিখোঁজ দুই পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অপর কর্মকর্তার লাশের সন্ধান আজন বিকেল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাঁর সন্ধানে নদীতে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন খুলনা থেকে আসা সাতজন ডুবুরি।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নিজামুল হক কুষ্টিয়ায় এসেছেন। দুপুরের দিকে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গতকাল সোমবার ভোরের ঘটনায় একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গতকাল ভোর চারটার দিকে উপজেলার বেড় কালোয়া এলাকার দুর্বৃত্তদের হামলায় নৌকা থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিখোঁজ হন। তাঁরা হলেন কুমারখালী থানার এএসআই সদরুল আলম ও এএসআই মুকুল হোসেন।

এদের মধ্যে এএসআই সদরুল আলমের লাশ ঘটনাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন কুমারখালী ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ।

জেলা পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল ভোর চারটার দিকে কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ছয়জন পুলিশ সদস্য, স্থানীয় দুই ইউপি সদস্য ও দুই মাঝি মিলে পদ্মার ওপারে চরসাদীপুর এলাকায় আসামি ধরতে যাচ্ছিলেন। এ সময় কয়েকটি নৌকার জেলেরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। তখন প্রাণ বাঁচাতে দুই পুলিশ সদস্য নদীতে ঝাঁপ দেন।

হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন কয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছানোয়ার হোসেন ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন। তাঁদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া এই হামলায় এসআই নজরুল ইসলাম আহত হয়েছেন। ওই নৌকায় থাকা আহত আরেক পুলিশ সদস্যের নাম জানা যায়নি।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, গতকাল ভোরে স্থানীয় ইউপি সদস্যদের সহযোগিতায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য নৌকা নিয়ে পদ্মা নদীতে যান। এ সময় তাঁরা জেলেদের মাছ লুট করার চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বেশ কয়েকটি নৌকার ১৫ থেকে ২০ জন লোক তাঁদের ওপর হামলা চালান।

বেড় কালোয়া এলাকার জেলে এজাহার শেখ বলেন, ‘রাতে পদ্মায় ইলিশ ধরছিলাম। সে সময় দুই ইউপি সদস্য ও ছয়জন পুলিশ এসে আমার কাছে থাকা মাছ নিয়ে চলে যায়। মাছ নেওয়ার পরে পুলিশ আবার মাছ ধরার অনুমতি দিয়ে চলে যায়।’

বেড় কালোয়া এলাকার জেলেদের নেতা ইয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, দিবাগত রাত তিনটার দিকে স্থানীয় জেলেরা প্রথমে তাঁকে ফোন দিয়ে জানান, নদীতে ঝামেলা হচ্ছে। ইউপি সদস্য ও পুলিশ সদস্যরা এসে জেলেদের কাছ থেকে তেল ও মাছ লুটপাট করে নিয়ে গেছেন। সে খবর শুনেও তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এরপর ভোর পাঁচটার দিকে এএসআই সদরুল আমাকে ফোনে বলেন, ‘ভাই, আমরা বিপদে আছি। সাহায্য করেন।’ তখন একটি নৌকায় চারজন গিয়ে এসআই নজরুলসহ চার পুলিশ সদস্য ও দুই ইউপি সদস্যকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। এসআই নজরুলের মাথা ফাটা ছিল।’

ইয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, ‘পুলিশ সাদাপোশাকে ছিল। ইউপি সদস্যরা জেলেদের মাছ, তেল ও টাকা লুটপাট করতে পুলিশ নিয়ে এসেছিল। ৩০ থেকে ৪০ জন জেলে ডাকাত ভেবে হামলা চালিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’

আজ মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে খুলনা থেকে আসা সাতজন ডুবুরি নদীতে তল্লাশি অভিযান শুরু করেন জানিয়ে কুমারখালী ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, আজ সূর্য ডোবার আগপর্যন্ত নদীতে তল্লাশি চালানো হবে।

পুলিশের আসামি ধরতে যাওয়া ও জেলেদের হামলার বিষয় নিয়ে এলাকায় ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, চরসাদীপুরে পদ্মা পাড়ি দিয়ে যেতে এক ঘণ্টা সময় লাগে। পদ্মার ওপারে পাবনা শহরের কাছাকাছি এলাকায় পুলিশ খুব কমই যায়। দিনের বেলা ঘটনা ঘটলে পুলিশ যেখানে যেতে অনীহা দেখায়, সেখানে গভীর রাতে যাচ্ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, চরসাদীপুর বা খেয়াঘাট শিলাইদহ ইউনিয়নের কোনো ইউপি সদস্যকে সঙ্গে না নিয়ে দূরের ইউপি সদস্যদের নিয়ে কেন পুলিশ আসামি ধরতে যাওয়ার কথা বলছে। এমনকি আসামি ধরতে গেলে সিভিল পোশাকে ও অস্ত্র ছাড়াই কেন যাবে? এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর মিলছে না।

আবার মৎস্য অফিস সূত্র জানিয়েছে, গতকাল রাতে পদ্মা নদীতে তাদের কোনো অভিযান ছিল না।

এ বিষয়ে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলামকে ফোন দিলে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপারেশন ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথকে ফোন দিলে তিনিও ফোনের লাইন কেটে দিয়ে খুদে বার্তায় জানান, পরে কথা বলবেন।