‘গতকাল (শুক্রবার) রাত ১০টার দিকে আমি নামাজ পড়ে বাড়িতে এসে দেখি, ঘরে লোক এসেছে। সম্পর্কে ভাতিজা হয়। মনে করলাম, আত্মীয়স্বজন হয়। আসছে থাকবে। আমাদের বাবারা ’৬২ সালে এখানে এসে বাড়িঘর করেছিল। জামালপুরে বেশি যাতায়াত হয় না। ওদিকে কী ঘটেছে, আমরা তো কিছুই জানি না।’
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের চর তিস্তাপাড়া এলাকার বাসিন্দা কৃষক মমতাজ আলী (৬৫)। আজ শনিবার ভোরে তাঁর বাড়ি থেকেই জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানি হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম ওরফে বাবুকে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব। মমতাজ আলী গ্রেপ্তার মাহমুদুলের চাচা (বাবার চাচাতো ভাই)।
গ্রেপ্তার এড়াতেই মাহমুদুল আলম পঞ্চগড়ের প্রত্যন্ত গ্রামে আত্মগোপন করতে এসেছিলেন বলে ধারণা এলাকাবাসীর। তবে তাঁদের আসার বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানতেন না। র্যাব গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁরা ঘটনা জানতে পারেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
মমতাজ আলীর ভাতিজা স্থানীয় মাদ্রাসাশিক্ষক ফকরুল ইসলাম বলেন, ‘ওই বাড়িতে লোক এসেছেন, সেটা আমাদের জানা ছিল না। তাঁরা কাউকে কিছু না বলে হঠাৎই এসেছিলেন বলে শুনেছি। ভোরবেলা জানতে পারি, ওই বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছে র্যাব। পরে গিয়ে দেখি, মাহমুল আলমসহ তিনজনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তবে মাহমুদুল আলমকে চিনতে পারলেও অন্য দুজনকে চিনতে পারিনি।’
চর তিস্তাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও চিলাহাটি ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য জাকির হোসেন বলেন, ‘সকালে ফজরের নামাজ পড়ে রাস্তায় হাঁটছিলাম। এ সময় শুনি, র্যাবের গাড়ি এসেছে আসামি ধরতে। পরে অনেক লোকজন দেখে সেখানে যাই। আমরা শুনেছি, ওই লোকগুলো শুক্রবার ওই বাড়িতে এসেছিলেন। তবে জামালপুরে যে এত বড় ঘটনা ঘটেছে, সেটা এলাকার লোক কিছুই জানত না। ঘটনা শুনে আমরাও তাঁদের বিচার দাবি করছি।’
৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে র্যাবের একটি দল মাহমুদুলসহ তিনজনকে ধরে নিয়ে যায়। ওই তিনজন গতকাল সন্ধ্যায় চর তিস্তাপাড়ার ওই বাড়িতে এসেছিলেন। তবে জামালপুরের ঘটনা সম্পর্কে তিনি নিজেও তখন পর্যন্ত কিছুই জানতেন না।
দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের চর তিস্তাপাড়া এলাকার মমতাজ আলীর বাড়ি থেকে র্যাবের একটি দল চারটি গাড়িতে করে মাহমুদুল আলমকে ধরে নিয়ে যায়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের কিছু জানানো হয়নি।
বুধবার রাত ১০টার দিকে বাড়িতে ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাটহাটি মোড়ে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন সাংবাদিক গোলাম রব্বানি। এ সময় তাঁকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাঁকে ফেলে পালিয়ে যায়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়। গোলাম রব্বানি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলার সংবাদ সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করতেন।