গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। কালকিনি উপজেলা সদরে চায়ের দোকানে চা পান করছিলেন নানা বয়সী মানুষ। আড্ডার মূল বিষয়, আগামী রোববারের নির্বাচন। কারও মুখে স্বতন্ত্র প্রার্থীর গুণগান, আবার কারও মুখে নৌকার সুনাম। ষাটোর্ধ্ব আবদুল কাইয়ুম বলে উঠলেন, ‘কালকিনিতে সবাই নৌকার লোক হইলেও এবার সব ভোট নৌকার পড়ব না। অনেক হিসাব-নিকাশ হইব ভোটে।’ রফিকুল ইসলাম নামের এক যুবক বলেন, ‘ভোটের মাঠে এবার খেলা জমবে। আগের মতো কেউ ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারবে না। নৌকার সঙ্গে ঈগলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে প্রতিটি কেন্দ্রে। যদি ইলেকশন ফেয়ার হয়, তাহলে মিরাকেলও ঘটতে পারে এখানে।’
ভোটের এই আলোচনা মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-সদর একাংশ) আসনের বিভিন্ন হাট-বাজারে। মাদারীপুর-১ ও ২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ কম। কিন্তু মাদারীপুর-৩ আসনে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় নৌকা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। মাদারীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং বর্তমান সংসদ সদস্য। তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কালকিনির সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের সামনে একটি টংদোকানে দাঁড়িয়ে কথা হয় শিক্ষক রাহাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন এখানে জমজমাট হবে। তবে সাধারণ ভোটার যাঁরা আছেন, তাঁদের মনে ভয়ও আছে। ভোট নিয়ে নৌকার সঙ্গে ঈগলের কোনো সংঘর্ষ হয় কি না, তা নিয়ে সবাই চিন্তিত। কারণ, নৌকা কোনোভাবেই আসন হারাতে চাইবে না।’
স্থানীয় ভোটার মজিবুর রহমান বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত তো এলাকায় নাই। কিন্তু নৌকার মাঝিরে তো আমরা গত পাঁচ বছরে একবারও দেহি নাই। তাই আমরা দেহি বারো আনা লোকই ঈগলের। নৌকার লোক হইয়াও কেউ নৌকার কথা কয় না।’ আরেক বয়োজ্যেষ্ঠ সোলেমান মোল্লা বলেন, ‘এবার যা-ই হোক, কেন্দ্র যাইয়া ভোট দিবার চাই। গতবার তো আর নির্বাচন হয় নাই। এহন আর নৌকা-ঈগল বুঝি না। এবার যে ভালো প্রার্থী, মোরা তারেই ভোট দিব।’
আজ শুক্রবার সকাল আটটায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। এর আগে শেষ সময়ে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থী তাহমিনা বেগম। এ আসনে আরও চারজন প্রার্থী থাকলেও নির্বাচনী এলাকায় কোথাও তাঁদের কোনো প্রচারণা দেখা যায়নি।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কালকিনি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল আটটার পর কেউ কোনো প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন না। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর করতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।