তনুকে সহপাঠী-সহকর্মীদের স্মরণ, দাবি জানালেন হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের করার

তনু হত্যাকাণ্ডের সাত বছর উপলক্ষে আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের উদ্যোগে স্মরণসভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান সহপাঠী ও নাট্যকর্মীরা। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের করার দাবি জানান তাঁরা। একই সঙ্গে দ্রুত আসামিদের শনাক্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার দাবি জানান।

তনু হত্যাকাণ্ডের সাত বছর উপলক্ষে আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের উদ্যোগে আয়োজিত স্মরণসভা ও মিলাদ মাহফিলে ওই দাবি জানানো হয়। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ওই স্মরণসভা করেন নাট্যকর্মীরা। কলেজের গ্রন্থাগার ভবনে অবস্থিত থিয়েটারের মহড়া কক্ষে ওই কর্মসূচি হয়। তনু ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের নাট্যকর্মী ছিলেন। স্মরণসভা ও মিলাদ মাহফিলে তনুর সহপাঠী ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।

ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সভাপতি এস এম রুবেলের সভাপতিত্বে স্মরণসভা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ আবু জাফর খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জিতেন্দ্রনাথ তরফদার। স্মরণসভায় স্মৃতিচারণ করেন নাট্যকর্মী পৃথল দাস, লিটন মিয়া, জান্নাতুল রানী, লিমা আক্তার প্রমুখ।

অধ্যক্ষ আবু জাফর খান বলেন, ‘তনু হত্যাকাণ্ড নিয়ে কলেজ পরিবার শোকাহত। সুষ্ঠু বিচার যেন ওর বাবা মা পায়, আমরা সেটাই চাই।’

ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সভাপতি এস এম রুবেল বলেন, ‘তনু আমাদের সংগঠনের প্রাণ ছিলেন। সক্রিয় কর্মী হিসেবে থিয়েটারকে সে ধারণ করত। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে আমাদের সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে চা–বাগান ঘুরে এসেছিল। সাত বছরেও তনু হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু পাওয়া গেল না। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। থিয়েটারের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে তাঁর স্মৃতি কখনো ভোলা যাবে না। বেশ প্রাণবন্ত ছিল তনু।’

তনুর ইতিহাস বিভাগের চার সহপাঠী থিয়েটারের স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বলেন, বিচারটা হওয়া দরকার। বছরের পর বছর পার হচ্ছে, এখনো অভিযোগপত্র দেওয়া হলো না। আসামিও শনাক্ত হলো না। মামলার গতি বাড়ানো দরকার।

২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে সোহাগী জাহান তনুর লাশ কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরের কালভার্টের ২০ থেকে ৩০ গজ পশ্চিমে ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ২১ মার্চ বিকেলে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

পরিবারের সদস্যদের কথা বলে জানা যায়, প্রথমে ২০১৬ সালের ২১ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলামকে। ২৩ আগস্ট পর্যন্ত আরও দুবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়। চতুর্থবার ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট আবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জালাল উদ্দিন আহম্মদ চার বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত করেও মামলার কিনারা করতে পারেননি।

পঞ্চমবার ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর হত্যা মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) ঢাকার সদর দপ্তরে স্থানান্তর করা হয়। এরপর পিবিআই তিনবার কুমিল্লা সেনানিবাসে এসে মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম ও তাঁদের ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পিবিআই ২০২০ সালের নভেম্বরের পর বাদীপক্ষের সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি দাবি করেছেন ইয়ার হোসেন। এ অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদেই ঘুরপাক খাচ্ছে মামলার তদন্ত।