চলন্ত লঞ্চ থেকে পড়ে ৯ ঘণ্টা মেঘনা নদীতে ভেসে থাকা জোহরা বেগম (৩৮) মারা গেছেন। আজ সোমবার সকালে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
জোহরা বেগম শরীয়তপুরের গোসাইরহাট থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঠান্ডার বাজার এলাকায় মেঘনা নদীতে পড়ে যান। ৯ ঘণ্টা নদীতে ভেসে থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে একটি নৌকার জেলেরা তাঁকে নদী–তীরবর্তী এলাকা থেকে উদ্ধার করেন। লঞ্চ থেকে পড়ে যাওয়ার সময় তাঁর বাঁ পা ভেঙে হাড় বেরিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়।
হাসপাতালে জোহরার সঙ্গে থাকা তাঁর মা নার্গিস বেগম প্রথম আলোকে মেয়ের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি জোহরাকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না। ওর দুই ছেলে ও এক মেয়ে মা হারা হয়ে গেল। আমি ওদের কী বলে সান্ত্বনা দেব!’
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের পশ্চিম বিষকাটালি গ্রামের বাসিন্দা জহিরুল ইসলামের স্ত্রী জোহরা বেগম। স্বামী–সন্তানের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে থাকতেন তিনি। ঈদে গ্রামে বেড়াতে যান। বুধবার রাতে ঈগল–৩ লঞ্চে গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁরা মাইঝাড়া ঘাট থেকে লঞ্চে ওঠেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে লঞ্চটি ঠান্ডার বাজার এলাকায় পৌঁছালে অসাবধানতাবশত তিনি লঞ্চের দ্বিতীয় তলা থেকে মেঘনা নদীতে পড়ে যান। সেখানে লঞ্চ থামিয়ে লঞ্চের সার্চলাইট দিয়ে তাঁকে খোঁজাখুঁজি করা হয়। না পাওয়া গেলে তাঁর সঙ্গে থাকা স্বামী ও ছেলেকে একটি জেলে নৌকায় নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ কল করে জোহরার নিখোঁজ হওয়ার তথ্য জানানো হয়।
জোহরার স্বজনেরা বলেন, মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করার পর জোহরাকে গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে স্বজনেরা তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যান।
জোহরার দেবর মাইদুল ইসলাম মৃধা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাবি চলন্ত লঞ্চ থেকে পড়ে বাঁচার জন্য ৯ ঘণ্টা মেঘনা নদীতে ভেসে ছিলেন। তখন বেঁচে ফিরলেও এখন আর বেঁচে নেই। চিকিৎসকেরা বলেছেন, রাতভর নদীতে থাকার কারণে তিনি ট্রমায় ছিলেন। পায়ের আঘাতটা গুরুতর ছিল। রক্তক্ষরণ হয়েছে।’
কুচাইপট্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন স্বপন প্রথম আলোকে বলেন, জোহরা জীবন বাঁচাতে সাহসের সঙ্গে ৯ ঘণ্টা মেঘনা নদীতে ভেসে ছিলেন। সবার সহযোগিতায় তাঁর উন্নত চিকিৎসা চলছিল। তবে সেই চেষ্টা সফল হলো না। তিনি মারা গেলেন। তাঁকে গ্রামে দাফন করা হবে।