চুয়াডাঙ্গার প্রধান নদী মাথাভাঙ্গা। ময়লা–আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলায় এই নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
চুয়াডাঙ্গার প্রধান নদী মাথাভাঙ্গা ভয়াবহ দূষণ ও দখলে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। নদীর দুই পার দখল করে একের পর স্থাপনা তৈরি, পাড় ভরাট করে চাষাবাদ এবং চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ময়লা–আবর্জনা ও হাটবাজারের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলায় পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
এদিকে মাছ শিকারের জন্য নদীর বুকজুড়ে তৈরি ‘কোমরবাঁধ’ নামের হাজারো প্রতিবন্ধক মাথাভাঙ্গার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নাব্যতা হারিয়ে অস্তিত্বসংকটের মুখে পড়েছে মাথাভাঙ্গা।
আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এ দিবস সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গার মিঠাপানির অন্যতম উৎস মাথাভাঙ্গা নদীকে দখল ও দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে বিভিন্ন নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন থেকে দাবি উঠেছে। মূলত এর আগে থেকেই ‘মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন প্রায় পাঁচ বছর ধরে নদীটির পানিদূষণ প্রতিরোধ ও দখলদারদের উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে আসছে।
মাথাভাঙ্গা নদীদূষণের জন্য ভুক্তভোগীরা পৌর কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করে আসছেন। এ বিষয়ে মেয়র জাহাঙ্গীর আল মালিক জানান, নদীকে বাঁচাতে এসব বর্জ্য ফেলা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছেন। মেয়র বলেন, ‘সুমিরদিয়া এলাকায় ডাম্পিং স্টেশনসহ বর্জ্য পরিশোধনাগার তৈরি করা হয়েছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে পৌর এলাকার পুরো ময়লা-আবর্জনা সেখানে পাঠানো হচ্ছে। তবে নদীর ধারে বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলা এখনো পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। দোকানদারেরা এখনো বিক্ষিপ্তভাবে নদীর ধারে ফেলছেন। তা ছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় নোংরা পানি নদীতেই ফেলতে হচ্ছে।’
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভুইয়া জানান, মাথাভাঙ্গা নদী নিজের ঝরনার পানিতে বেঁচে আছে। গত বছরের ১ আগস্ট মাথাভাঙ্গা নদীতে ব্যাপক মাছের মড়ক দেখা দেয়। এ ঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত দল নদীতে নেমে তলদেশে কাথা-বালিশ থেকে শুরু করে যাবতীয় আসবাবের ভাঙা অংশসহ পচা-গন্ধ আবর্জনার বড় একটি স্তরের অস্তিত্ব পায়। তদন্ত কমিটি পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়াকে মাছ মরে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখিয়েছিলেন। তদন্ত দলের সুপারিশ অনুযায়ী নালার নোংরা পানির সঙ্গে ময়লা-আবর্জনা যাতে নদীতে গিয়ে না পড়ে, সে জন্য নালার মুখে লোহার নেট দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মাথাভাঙ্গার দখল ও দূষণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, চুয়াডাঙ্গায় মাথাভাঙ্গা নদীর গড় প্রশস্ততা ৯৫ মিটার। বর্ষা মৌসুমে পানির গড় গভীরতা থাকে ৯ দশমিক ৫০ মিটার। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে গড়ে তা ১ দশমিক ২৫ মিটারে নেমে আসে। তখন নদীর অনেক স্থান শুকিয়ে যায়। ফলে নদী নৌ চলাচলের কোনো অবস্থা থাকে না।
গত ১৯ থেকে ২১ মে পর্যন্ত নৌকায় চড়ে এবং নদীর পাড় ও নদীসংলগ্ন রাস্তা দিয়ে অন্তত ৩০ কিলোমিটার ঘুরে নদী দখল ও দূষণের ভয়াবহ চিত্র চোখে পড়ে। পরিকল্পিত পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় অবাধে নালার সঙ্গে শৌচাগারের সরাসরি সংযোগ তৈরি করা হয়েছে। এ কারণে এসব শৌচাগারের মলমূত্র সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ছে। একসময় এই নদীর পানি দিয়ে মানুষ রান্নাবান্না করলেও এখন গোসল করতেও ভয় পান।