বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সারের গুদাম থেকে ৯৪ দশমিক ২ মেট্রিক টন সার চুরির ঘটনায় প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে গুদামরক্ষক ও বিএডিসির উপসহকারী পরিচালক জসিউর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার চেয়ারম্যানের নির্দেশে বিএডিসির সচিব মো. আশরাফুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
বিএডিসির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ সাজ্জাদ মুঠোফোনে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করে বলেন, সারের বর্তমান মজুত জানার জন্য আবার গণনা করা হচ্ছে এবং সার আত্মসাতের ঘটনায় জসিউর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর আগে সার চুরির অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন পরিদর্শনের পর বিএডিসির উপপ্রধান (পরিকল্পনা) জামাল উদ্দীন ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মঈনুল ইসলামকে নিয়ে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি টাস্কফোর্স গঠন করেন বিএডিসির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ সাজ্জাদ। টাস্কফোর্স অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাঁকে সাময়িক বরখাস্তের সুপারিশ করে। পরে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক মো. কাজেম আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিনে গুদামে গিয়ে জানা গেছে, সান্তাহারে বিএডিসির গুদামরক্ষকের দায়িত্বে থাকা জসিউর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া চালানের মাধ্যমে গুদাম থেকে ১৮ দশমিক ৩০০ মেট্রিক টন ডাই–অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি), ৪৪ দশমিক ১০০ মেট্রিক টন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) ও ৩১ দশমিক ৮০০ ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সার চুরির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের পর গত ২৬ এপ্রিল আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টুকটুক তালুকদারসহ কর্মকর্তাদের নিয়ে সান্তাহার গুদাম পরিদর্শনে যান বিএডিসির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ সাজ্জাদ। পরে তিনি বিএডিসি কর্মকর্তাদের দিয়ে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি টাস্কফোর্স গঠন করেন। টাস্কফোর্সের সদস্যরা গত সোমবার ওই গুদামে গিয়ে সারের বস্তা গুণে সার লোপাটের প্রমাণ পান। পরে তাঁদের সুপারিশের ভিত্তিতে মঙ্গলবার তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে সার লোপাটের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে জসিউর রহমান মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন জায়গা থেকে সার সংগ্রহ করে পুনরায় গুদামে এনে রাখেন বলে খবর পাওয়া যায়। এ বিষয়ে কথা বলতে জসিউর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
সার চুরির ঘটনায় গুদাম থেকে সার সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক ডিলার। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ডিলাররা সার নেওয়ার জন্য গুদামে অপেক্ষা করেন। পরে বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক মো. কাজেম আলী সার সরবরাহের নির্দেশ দিলে বেলা তিনটার দিকে ডিলারদের সার সরবরাহ করা হয়। এ সময় জসিউর রহমানের বাসভবনে প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন মো. কাজেম আলী। পরে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি সার গণনার জন্য সেখানে যান।