নিখোঁজ যাত্রী সজল দাস, রাসেল আমিন ও চালক আল আমিন (বাঁ থেকে)
নিখোঁজ যাত্রী সজল দাস, রাসেল আমিন ও চালক আল আমিন (বাঁ থেকে)

কীর্তনখোলায় স্পিডবোটডুবিতে নিখোঁজ ৩ জনের সন্ধান এখনো মেলেনি

বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষে একটি যাত্রীবাহী স্পিডবোট ডুবে যাওয়ার ঘটনায় এখনো তিনজন নিখোঁজ। আজ শুক্রবার সকালে এই তিনজনের খোঁজে নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা অভিযান চালালেও তাঁদের সন্ধান মেলেনি। এই তিনজনের মধ্যে দুজন যাত্রী এবং অন্যজন স্পিডবোটটির চালক।

বরিশাল সদর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সনাতন চন্দ্র সরকার আজ শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অভিযান চালিয়েও ওই তিনজনের সন্ধান পাইনি। এ জন্য অনেকটা আশা ছেড়ে দিয়েছি।’

এই তিনজন হলেন বরিশাল নগরের বিমান বন্দর থানা এলাকার রহমতপুর এলাকার  দুলাল দাসের ছেলে সজল দাস (৩০), পটুয়াখালীর কলাপড়া উপজেলার বাছুমখালী গ্রাামর রাসেল আমিন (২৫) ও স্পিডবোটচালক আল আমিন (২২)। তাঁদের মধ্যে সজল দাস ভোলায় ব্র্যাকের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে চাকরি করতেন বলে তাঁর বন্ধু তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তবে রাসেল আমিনের বিস্তারিত পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

নিখোঁজ সজল দাসের বন্ধু তানভীর আহমেদ অভিযোগ  করেন, ‘আমরা যত দূর জানতে পেরেছি, তাতে স্পিডবোটটির চালক পালিয়েছেন। তিনি নিখোঁজ নন। কারণ, ঘটনার সময় চালক স্পিডবোটটি চলন্ত অবস্থায় যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া তুলছিলেন। ওই বোটে চালকসহ ১১ জন যাত্রী ছিলেন। চালকের খামখেয়ালির কারণেই স্পিডবোটটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জনতার হাট খেয়াঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে স্পিডবোটের এক যাত্রী মারা যান এবং এক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় স্পিডবোটের চালক ও কয়েকজন যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছিল নৌ পুলিশ। তবে নিখোঁজদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না।

মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম জালিস মাহমুদ (৫০)। তিনি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার বাসিন্দা। তিনি স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানিতে ভোলার বিক্রয় প্রতিনিধি (এসআর) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর সহকর্মী মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এ ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যের নাম মানসুর আহমেদ (৩০)। তিনি ভোলার দৌলতখান থানার কনস্টেবল ও বরগুনা সদরের বাসিন্দা। তাঁকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জনতার হাট এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি বলেন, তিনি বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নদীর মধ্যে বিকট শব্দ শুনে তাকিয়ে একটি বাল্কহেডকে যেতে দেখেন। কিছু সময় পর দেখেন, কয়েকজন লাইফ জ্যাকেট পরা অবস্থায় সাঁতরে কিনারে আসার চেষ্টা করছেন। পরে স্থানীয় লোকজন ট্রলার নিয়ে ছয়জনকে উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসেন। এ ছাড়া লাহারহাট থেকে বরিশালের উদ্দেশে যাওয়া একটি স্পিডবোটে আরও দুই যাত্রীকে উদ্ধার করে বরিশালে নেওয়া হয়।

ভোলার ভেদুরিয়া ঘাট থেকে ১০ যাত্রী নিয়ে স্পিডবোটটি বরিশালের ডিসি ঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয়। এটি লাহারহাট খাল থেকে কীর্তনখোলা নদীতে প্রবেশ করার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। নৌ পুলিশ জানায়, শুক্রবার নিখোঁজদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ও নৌ পুলিশ অভিযান চালায়। বেলা তিনটা পর্যন্ত তাঁদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে বরিশাল কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. বেলাল উদ্দিন আজ বিকেল পৌনে চারটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীর উপরি অংশে অনুসন্ধানের পর আমাদের ডুবুরিরা তলদেশে অনুসন্ধান চালিয়েছেন। কিন্তু নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান মেলেনি। তবে আমরা এখনো অভিযান শেষ করিনি।’