বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর (পরশ) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর বাবা কাজী নূর উদ্দিন বাদী হয়ে রামপুরা থানায় হত্যা মামলা করেছেন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে তিনি মামলাটি করেন। মামলায় ফারদিন নূরের বান্ধবী আয়াতুল্লাহ্ বুশরা এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। এরপর আজ বৃহস্পতিবার সকালে রামপুরার বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, ৪ নভেম্বর বেলা তিনটার দিকে ফারদিন নূর ডেমরার কোনাপাড়া এলাকার বাসা থেকে বুয়েটের উদ্দেশ্যে বের হন। পরদিন ৫ নভেম্বর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বাসায় ফিরে মায়ের সঙ্গে দুপুরের খাবার খাওয়ার কথা ছিল তাঁর। পরবর্তীতে তাঁরা (মা–বাবা) জানতে পারেন, ফারদিন নূর পরীক্ষায় অংশ নেননি এবং তাঁকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বুয়েটের শিক্ষক ও ফারদিনের সহপাঠীরা তাঁর মুঠোফোনে চেষ্টা করেও তাঁকে পাচ্ছেন না, তা বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টি জানতে পেরে ৫ নভেম্বর বিকেল ৫টার দিকে তাঁরাও (মা–বাবা) মুঠোফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান পাননি তাঁরা। এরপর কাজী নূর উদ্দিন রামপুরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এজাহারে লেখা আছে, ফারদিন নূরের বাবা কাজী নূর উদ্দিনের করা জিডির পরিপ্রেক্ষিতে রামপুরা থানা-পুলিশের জেরার মুখে আয়াতুল্লাহ্ বুশরা (ফারদিনের বান্ধবী) জানান, ফারদিন ৪ নভেম্বর বাসা থেকে বের হওয়ার পর ওই দিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। প্রথমে তাঁরা দুজন সিটি কলেজ এলাকায় মিলিত হন এবং পরে নীলক্ষেত–ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে বেড়ান। বিকেল পাঁচটার দিকে ‘ইয়াম চা ডিস্ট্রিবিউশন’ নামের একটি রেস্টুরেন্টে খাবার খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ান। রাত ১০টার দিকে আয়াতুল্লাহ্ বুশরার সঙ্গে রিকশায় করে রামপুরা টিভি স্টেশন এলাকায় আসেন ফারদিন।
তিন দিন খোঁজাখুঁজির পর গত সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তিনি (কাজী নূর উদ্দিন) জানতে পারেন, তাঁর ছেলের লাশ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। খবর পেয়ে তাঁরা গিয়ে ছেলে ফারদিনের লাশ শনাক্ত করেন।
মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ধারণা করা হচ্ছে, ফারদিন নূরকে ৪ নভেম্বর রাত ১০টার পর থেকে ৭ নভেম্বর বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত যেকোনো সময়ে রামপুরা এলাকা বা অন্য কোথাও হত্যাকারীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তাঁর ছেলের নিখোঁজ হওয়া ও মৃত্যুতে আয়াতুল্লাহ্ বুশরার ইন্ধন রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ অবস্থায় তাঁর ছেলের হত্যার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার নিশ্চিত করতে এজাহার দাখিল করেন তিনি।