খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাগেরহাটে পথে পথে নেতা-কর্মীদের বাধা ও হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলার খুলনাগামী বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে শ্রমিক লীগ নেতারা তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে। এসব স্থানে দিনভর নেতা-কর্মীদের সরব উপস্থিতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলার নেতাদের মোটরসাইকেলে মহড়া করতে দেখা যায়। কয়েকটি জায়গায় ডেক চড়িয়ে রান্নার ব্যবস্থাও লক্ষ করা গেছে।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কের বারাকপুর এলাকায় দেখা গেছে, শ্রমিক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে খুলনাগামী সব ধরনের যান চলাচলে বাধা দিচ্ছেন। সকাল থেকে কোনো বাস না চললেও ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, ভ্যানে চলা যাত্রীদেরও দাঁড় করানো হচ্ছে। সন্দেহ হলে সাইকেলে চলাচলকারী ব্যক্তিদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পাশেই ভ্যানে করে আনা হয়েছে ডেক, চাল-ডালসহ রান্নার সামগ্রী। এমন আয়োজন আরও কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে।
ওই ভ্যান থেকে মালামাল নামানো এক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে যাঁরা রাস্তায় ডিউটি করছেন, তাঁদের জন্য রাতের রান্না হচ্ছে।’
বাগেরহাটের সব এলাকা থেকে খুলনাগামী সড়কে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা। গতকাল বৃহস্পতিবার জেলার শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জের প্রায় অর্ধশত নেতা-কর্মীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম। তবে তিনি দাবি করেন, বাধা উপেক্ষা করে অনেক নেতা-কর্মী সমাবেশে যোগ দিতে ইতিমধ্যে খুলনায় পৌঁছেছেন।
বাগেরহাটের অন্তত চারটি এলাকার বিএনপির সাত কর্মীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের ভাষ্য, শান্তি চাইলে এলাকায় থাকতে বলছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। গতকাল থেকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে এসে তাঁরা বলে গেছেন, ‘যারা বিএনপি করো, রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ করা হবে। যদি বাড়িতে না পাওয়া যায়, বিপদ আছে।’
আজ শুক্রবার বিকেলে ও সন্ধ্যায় বাগেরহাটের বিভিন্ন ইউনিয়নে মিছিল হয়েছে। এর আগে গতকাল খুলনার সমাবেশে যেন কেউ যেতে না পারেন, সে বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সভা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে।
যদিও বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে বাগেরহাট আন্তজেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ তালুকদার আবদুল বাকি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাসড়কে মাহিন্দ্রা, ইজিবাইকসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধের দাবিতে মালিক-শ্রমিকেরা পরিবহন ধর্মঘট পালন করছেন। এখানে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। ব্যবসায়িক কারণে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।’
এদিকে সকাল থেকে বাস চলাচল না করায় চরম দুর্ভোগে পড়েন জরুরি প্রয়োজনে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে বের হওয়া সাধারণ মানুষ। চাকরির পরীক্ষা শেষে দুপুরে শিশুসন্তান নিয়ে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গাড়ির অপেক্ষায় থাকা সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমি বিএনপি-আওয়ামী লীগ বুঝি না। দলও করি না। রাস্তায় এই শিশুকে নিয়ে এই বিপদ থেকে মুক্তি চাই। সকালে পরীক্ষা দিছি। বহু কষ্টে আসছি। এখনে মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসক দেখাতে খুলনা যাব, কিন্তু যেতে পারছি না।’
সড়কে যান চলাচলে বাধা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশের গণমাধ্যম শাখার সমন্বয়ক ও পরিদর্শক এস এম আশরাফুল আলম বলেন, সড়কে কোথাও যান চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে, এমন তথ্য পুলিশের কাছে নেই।