রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ দিনের ব্যবধানে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৪২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। দগ্ধ রোগীদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। কনকনে শীতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে ও গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়ে তাঁদের অধিকাংশ দগ্ধ হচ্ছেন।
চিকিৎসকেরা বলছেন, অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। তাঁরা সাধ্যমতো দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি রোগীদের আগুনের ব্যাপারে সচেতন করছেন।
রংপুর মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টায় দগ্ধ হয়ে ৫ জন ভর্তি হয়েছেন। ১০ দিনের ব্যবধানে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪২ জন দগ্ধ রোগী। এর মধ্যে বার্ন ইউনিটে ১১ জন এবং সার্জারি, শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ৩১ জন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। তাঁরা শীত থেকে বাঁচার জন্য আগুন পোহাতে ও গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়ে দগ্ধ হন।
সর্বশেষ ৪৮ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৫ জন হলেন কুড়িগ্রাম সদরের সাজু মিয়ার স্ত্রী ববিতা বেগম (৩৫), কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর আশরাফুল আলমের মেয়ে আয়শা সিদ্দিকা (৬), রংপুর নগরের মুন্সিপাড়া এলাকার আলেয়া বেগম (৬৫), লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার সবুজ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী পলি রানী (৩০) ও নীলফামারীর ডিমলার মমিনুর ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৪০)। তাঁরা খড়কুটো জ্বালিয়ে ও চুলার আগুনে শীত নিবারণ করতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন।
বার্ন ইউনিটের দায়িত্বে নিয়োজিত চিকিৎসক ফারুক আলম প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসাধীন রোগীরা আগুন পোহানোসহ গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন। বার্ন ইউনিটে ১২টি শয্যার মধ্যে ১১ জন চিকিৎসাধীন। রোগীদের শরীরের ১০ থেকে ৪৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ সার্জারি ও শিশু ওয়ার্ডে দগ্ধ রোগীরা ছটফট করছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর দগ্ধ শিশু আয়শা সিদ্দিকা ৭ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন। শিশুটির মা শাহানা শয্যার পাশে বসে আছেন। তিনি বলেন, ‘চুলায় ভাত রান্না করছিলাম, এমন সময় মেয়েটি আগুন পোহাতে চুলার পাশে এসে বসে। কখন যে তার জামায় আগুন ধরে যায়, বুঝতে পারিনি। কোমর থেকে পা পর্যন্ত পুড়ে গেছে।’
আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে গতকাল হাসপাতালে আসেন রংপুর নগরের মুন্সিপাড়া এলাকার আলেয়া বেগম। তিনি ১০ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন। আলেয়ার শরীরের নিচের অংশে প্রায় ৪৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। আলেয়ার স্বজনেরা জানান, খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহানোর সময় হঠাৎ শাড়িতে আগুন ধরে যায়।
হাসপাতালের ৯ নম্বর শয্যায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার পলি রানী। সঙ্গে থাকা তাঁর শাশুড়ি আরতি রানী জানান, তীব্র ঠান্ডায় আগুন পোহাতে গিয়ে কাপড়ে আগুন ধরে যায়। শরীরের নিচের অংশ পুড়ে গেছে।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ফারুক আলম প্রথম আলোকে, অল্প কয়েক দিন হলো রংপুর অঞ্চলে তীব্র শীত পড়েছে। শীত থেকে বাঁচতে গ্রামের মানুষ খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে গরম পানির ব্যবহারও বেড়ে যায়। অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। তিনি বলেন, তাঁরা সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।