কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) দুটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিতে এক রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকের মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবদুর রশিদ (৩০) ক্যাম্পের সি ব্লকের আবুল বশরের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, আজ আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিতে আবদুর রশিদের মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গুলিতে নিহত রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবক আবদুর রশিদের মরদেহ দুপুরে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালাচ্ছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশিদ বলেন, আজ সকাল আটটার দিকে ক্যাম্প-৮–এর পশ্চিমের একটি জায়গায় স্বেচ্ছাসেবক আবদুর রশিদকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় একদল দুষ্কৃতকারী। খবর পেয়ে এপিবিএন ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ আবদুর রশিদকে উদ্ধার করে আশ্রয়শিবিরের হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। কী কারণে এবং কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, এর রহস্য উদ্ঘাটন চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা নেতা প্রথম আলোকে বলেন, নিহত আবদুর রশিদ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন বাহিনীর সমর্থক ছিলেন। কয়েক মাস ধরে নবী হোসেন বাহিনীর সঙ্গে আরএসও যুক্ত হয়ে আরসার বিরুদ্ধে লড়ছে। আর এ কারণে আরসা সন্ত্রাসীরা আবদুর রশিদকে হত্যা করে থাকতে পারে। সম্প্রতি আশ্রয়শিবিরে আরসা ও আরএসওর মধ্যে গোলাগুলি, সংঘর্ষ ও খুনোখুনির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে।
পুলিশ জানায়, ৮ মার্চ উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-২) গুলি করে রোহিঙ্গা মাঝি (নেতা) সৈয়দ হোসেনকে (৪২) হত্যা করা হয়। ওই দিন সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ডব্লিউ ব্লকের একটি দোকানে বসে চা পানের সময় একদল অস্ত্রধারী গুলি ছোড়ে। এতে হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আশপাশের লোকজন তাঁকে আশ্রয়শিবিরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গাদের দাবি, আরসা সন্ত্রাসীরা গুলি করে সৈয়দ হোসেনকে হত্যা করেছে।
এর আগে ৬ মার্চ গভীর রাতে একদল অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৯) গুলি চালিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে আরসার ক্যাম্প কমান্ডার নুর হাবি প্রকাশ ওয়াক্কাস ওরফে নুর কলিমকে (৪২)। এ হত্যার বদলা নিতে আরসার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা সৈয়দ হোসেনকে হত্যা করে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৩ মার্চ দুপুরে উখিয়ার তাজনিমারখোলা আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৯) বসতবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করা হয় রোহিঙ্গা মো. রফিককে (৩৫)। নিহত রফিক এ-ব্লকের ৯ নম্বর শেডের বাসিন্দা দিল মোহাম্মদের ছেলে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৭) ছুরিকাঘাত ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আশ্রয়শিবিরের একটি মসজিদের ইমাম সামসু আলমকে (৩৮)। তিনি ওই আশ্রয়শিবিরের সি ব্লকের এইচ-৭৯ শেডের বাসিন্দা মিয়া চানের ছেলে। বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের তথ্যমতে, গত সাড়ে চার মাসে আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৩১ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ৮ জন আরসা, ১ জন স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।