বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ গ্রহণ শুরু হয়েছে। এ জন্য প্রশাসন ভবন, ছাত্রবিষয়ক দপ্তর ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অভিযোগ গ্রহণ বাক্স বসিয়েছে কমিটি
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ গ্রহণ শুরু হয়েছে। এ জন্য প্রশাসন ভবন, ছাত্রবিষয়ক দপ্তর ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অভিযোগ গ্রহণ বাক্স বসিয়েছে কমিটি

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তদন্তে ২৬ সদস্যের কমিটির অভিযোগ গ্রহণ শুরু

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) গত সাড়ে ১৫ বছরে নির্যাতন, র‍্যাগিং, যৌন হয়রানি, সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ তদন্তে ২৬ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন। কমিটি গঠনের পর প্রথম ধাপে আজ বুধবার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ গ্রহণ শুরু হয়েছে। আগামী নভেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত অনলাইন ও সশরীর শিক্ষার্থীরা অভিযোগ জানাতে পারবেন। এরপর ধাপে ধাপে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ নেওয়া হবে।

গত ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোফরেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক জি এম মুজিবর রহমানকে সভাপতি ও কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান সরকারকে সদস্যসচিব করে ২৬ সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত ও বিচারকাজে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে আছেন ময়মনসিংহ জজ কোর্টের আইনজীবী মো. খালেদ হোসেন (টিপু)। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এ ধরনের পদক্ষেপ এটিই প্রথম।

শিক্ষার্থীরা র‍্যাগিং, যৌন হয়রানি, গেস্টরুমে নির্যাতন, সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, মানসিক-শারীরিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া নির্ধারিত ফরম পূরণ করে অনলাইনেই জমা দিতে পারবেন। ফরমটি প্রিন্ট করে হাতে লিখেও সরাসরি জমা দেওয়ার সুযোগ আছে। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন, ছাত্রবিষয়ক দপ্তর ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আজ দুপুর ১২টার দিকে ৩টি অভিযোগ গ্রহণ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, অভিযোগ করার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে। যেসব অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আছে, তারা বিচার করার চেষ্টা করবে। তাদের সঙ্গে আইনজীবীদের দলও থাকবে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কোনো অভিযোগ ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত হলে সে ক্ষেত্রে সেভাবে আগানো হবে। অন্যায়কারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হলে তাঁর সনদ বাতিল বা কর্মক্ষেত্রে চিঠি পাঠিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে অধ্যয়নরত হলে ছাত্রত্ব বাতিল ও বহিষ্কারের বিষয়গুলো আসবে।

কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জি এম মুজিবর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে কমিটির সদস্যরা সরাসরি গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি ছাড়া অভিযোগ দিতে অনুপ্রাণিত করবেন। সংবেদনশীল ঘটনায় প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের জবানবন্দি নেওয়া হবে। অবশ্যই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হবে, মিথ্যা অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মূলত চাওয়াটাই ছিল যাতে কারও প্রতি কোনো বৈষম্য না হয়। শিক্ষার্থীদের ওপর হওয়া বৈষম্য ও জুলুমের বিচার করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত কমিটিকে ন্যায়ভিত্তিক বিচার-বিবেচনা করে সঠিক সাক্ষ্যপ্রমাণসহ যাচাই করার অনুরোধ করবেন। গত সাড়ে ১৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত দুর্নীতি, নির্যাতন এবং প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়ম তদন্ত করে সুপারিশ দেবে কমিটি। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি মাইলফলক স্থাপন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।