কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেসের চলন্ত বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কীভাবে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতের ঘটনায় যুক্ত ১১ জনের মধ্যে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার ভোরে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা রাজা মিয়া নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। তিনি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামের বাসিন্দা। টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে রাজা মিয়ার মুঠোফোন নম্বরটি শনাক্ত করা হয়। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর সঙ্গে থাকা ডাকাত দলের অপর সদস্যদের বিষয়ে পুলিশ জানতে পারে।
রাজা মিয়ার কাছ থেকে পুলিশ মো. আওয়ালের নাম জানতে পারে। ডিবি পুলিশ তাঁকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর টান কালিয়াকৈর থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি সেখানে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছিলেন।
ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আওয়ালের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর নুরনবীর অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু নুরনবী কোথায় থাকেন, তা জানাতে ব্যর্থ হন আওয়াল। এ সময় ডিবি পুলিশ কালিয়াকৈরে তাদের এক ‘সোর্সকে’ ডেকে আনে। আওয়ালের কাছে নুরনবীর চেহারার বর্ণনা শুনে চিনতে পারেন সেই ‘সোর্স’। চন্দ্রা এলাকা থেকে সোর্সকে নিয়ে ডিবির দল রওনা হয় নুরনবীর বাড়ির দিকে। সোহাগ পল্লী এলাকায় গাড়ি রেখে প্রায় আধা ঘণ্টা পায়ে হেঁটে নুরনবীর বাড়িতে পৌঁছে যায় গোয়েন্দা দলটি।
গত শুক্রবার ভোরে ডিবি পুলিশের একটি দল নুরনবীকে গ্রেপ্তার করে। সেই অভিযানে থাকা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আহসানুজ্জামান বলেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার দুর্গম এলাকায় নুরনবীর বাড়ি। ওই বাড়িতে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। কর্দমাক্ত জমি পেরিয়ে যেতে হয় সেখানে। শুক্রবার ভোরের আলো ফোটার আগেই পুলিশ বাড়িটি ঘিরে ফেলে। পুলিশের ডাকে প্রথমে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন নুরনবীর বাবা বাহেজ উদ্দিন ও মা জরিনা বেগম। তাঁরা পুলিশের কাছে জানতে চান, তাঁদের ছেলেকে কেন গ্রেপ্তার করা হবে। তাঁরা তাঁদের এক আইনজীবী আত্মীয়ের সঙ্গে পুলিশকে কথা বলিয়ে দেন। বাইরে যখন এসব কথাবার্তা চলছিল, তখন নুরনবী দা দিয়ে ঘরের ভেতরে সিঁধ কাটছিলেন পেছন দিয়ে বের হয়ে পালানোর জন্য। ঠিক সে সময় পুলিশের কয়েকজন সদস্য ঘরে ঢুকে নুরনবীকে ধরে ফেলেন।
এসআই মো. আহসানুজ্জামান বলেন, লাল মাটির কাদামাখা পথ পাড়ি দিয়ে নুরনবীদের বাড়িতে যেতে হয়। সরকারি খাসজমিতে তাঁরা ঘর তুলে বসবাস করেন। আশপাশে কোনো বাড়িঘর নেই। ১৫–১৬ বছর আগে কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে নুরনবীর মা–বাবা এসে এখানে বসবাস শুরু করেন। নুরনবীর ঘর থেকে বাস ডাকাতির সময় লুট করা একটি মুঠোফোন সেট উদ্ধার করা হয়। নুরনবীর নামে একটি ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা এবং একটি ছিনতাই মামলা আছে।
আওয়াল পুলিশকে বলেছেন, কোনো সমস্যা হতে পারে ভেবে কালিয়াকৈরের কাঞ্চনপুরে নিজের বাড়িতে না গিয়ে তিনি শ্বশুরবাড়িতে যান। আর নুরনবী বলেন, তাঁর দুর্গম এলাকার বাড়ি সহজে কেউ খুঁজে পাবেন না ভেবে তিনি নিজের বাড়িতেই ছিলেন।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ওই দিন বাস ডাকাতিতে মোট ১১ জন অংশ নেয় বলে তাদের তদন্তে বের হয়ে এসেছে। এদের মধ্যে তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকি আটজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ডাকাতিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন পরিবহনশ্রমিক আর কয়েকজন পোশাক কারখানার শ্রমিক।