কক্সবাজারে দ্রুত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত জুনে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী। আর চলতি জুলাইয়ের আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হন ২৭১ জন। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ গুণ। বর্ষাকাল হওয়ায় এখন ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী এডিস মশার বংশবিস্তারের সময়। চিকিৎসকদের দাবি, এমন পরিস্থিতিতে আগে থেকে নগর কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি থাকলে ডেঙ্গুর প্রকোপ সামাল দেওয়া সম্ভব। তবে মশা নিধনে পৌরসভার তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। উল্টো শহরের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার লার্ভা দেখা গেছে।
আজ সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, পৃথক ৩টি ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ৪২ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ৩ শিশু, পুরুষ ২৭ ও নারী ১২ জন। হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে গতকাল সোমবার দুপুরে ভর্তি হয়েছেন পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের নুনিয়াছটার মৎস্য ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন (৪০)। আজ দুপুর পর্যন্ত তাঁর শারীরিক উন্নতি হয়নি জানিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, মশার কামড় থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ঘরে মশারি, কয়েল ও অ্যারোসল ব্যবহার করতেন তিনি। কিন্তু বাইরের পরিবেশ ভালো নয়। সম্ভবত বাড়ির বাইরে এডিস মশার কামড়ে তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন।
পাশের মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাহারছড়ার গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার (২৫)। তিনি বলেন, এলাকায় মশা-মাছির উৎপাত বেশি। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হয় না। এ জন্য দিন দিন মশা বাড়ছে।
২৫ জুলাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মহাজেরপাড়ার বাসিন্দা ও বেসরকারি সময় টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সুজাউদ্দিন। তিনি বলেন, খবরের খোঁজে তাঁকে প্রায় সময় উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে যেতে হয়। সেখানে ডেঙ্গু বেশি। সম্ভবত তিনি সেখানে মশার কামড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন।
হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য মতে, আজ পর্যন্ত এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৭১ জন। জুনে ৫৩ জন, মে মাসে ৩১, এপ্রিলে ১৬, মার্চে ২৭, ফেব্রুয়ারিতে ১৩ ও জানুয়ারিতে ৩৪ জন। ৭ মাসে মোট ৪৪৫ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ১৫৫ জন।
ডেঙ্গু রোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে জানিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভারী বর্ষণ ও শহরের জলাবদ্ধতার কারণে মশার বংশবিস্তার ঘটছে। এ কারণে আগের তুলনায় ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে পাঁচ গুণ। ডেঙ্গু রোগী বেশির ভাগ শহর এলাকার বাসিন্দা।
শহরের পাশাপাশি টেকনাফ, উখিয়া, রামু, ঈদগাঁও, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলাতে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। চলতি জুলাইয়ে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন ৪৬ জন, যা জুনে ছিল মাত্র ২ জন। এখন প্রতিদিন জ্বর, মাথাব্যথা ও শরীরব্যথা নিয়ে অসংখ্য রোগী হাসপাতালে আসছেন জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রণয় রুদ্র বলেন, রোগীর চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ২ হাজার ১০৯ জন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনজন রোহিঙ্গা।
শহরের বৈদ্যঘোনা, ঘোনাপাড়া, বড়বাজার, টেকপাড়া, তারাবনিয়াছড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ২৩টির বেশি সড়কের পাশে নালা–নর্দমা ও ময়লা–আবর্জনায় ভরে আছে। স্থানীয় লোকজন জানান, সন্ধ্যার পর মশার উৎপাত বেড়ে যায়। ঘরে থাকা দায় হয়ে পড়ে। মশারি টাঙিয়েও শিশুরা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারছে না।
শহরের অলিগলিতেও পড়ে আছে ময়লা–আবর্জনা। গতকাল থেকে কক্সবাজারে শুরু হয়েছে ভারী বর্ষণ। ময়লা–আবর্জনায় জমে থাকা পানি ও জলাবদ্ধতা থেকে জন্ম নিচ্ছে মশা। কোথাও স্বস্তি নেই মানুষের।
পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভরাট নালা পরিষ্কার ও নালার ওপর নির্মিত শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। মশা নিধনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। কিন্তু ভারী বর্ষণের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।