বসন্তের ঝলমলে সকালে গণিত জয়ের স্বপ্ন নিয়ে হাজারো শিক্ষার্থীর পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী বগুড়া জিলা স্কুলের মাঠ। সেখানে তাদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবের।
‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতা এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বগুড়ায় আঞ্চলিক গণিত উৎসবের আয়োজন করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। এতে বগুড়া, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে গণিত উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আফসানা ইয়াসমিন ও বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামাপদ মুস্তফী এবং বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বগুড়া শাখার ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রাত্যহিক জীবনে সবাইকে গণিত নিয়ে চলতে হয়। তবে অনেকেই আবার গণিতকে ভয় পায়। গণিতের ভয় দূর করতে হবে। আনন্দ নিয়ে গণিতের চর্চা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘অঙ্কে ক্যালকুলেটরের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নিজের মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। গণিত ভয়ের কোনো বিষয় নয়, গণিত আনন্দের, উৎসবের বিষয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য গণিতকে জয় করতে হবে। গণিতের স্বপ্নজয়ীদের এই মাঠে সংবর্ধনা দিতে চাই। আজকের এই খুদে গণিতবিদেরাই আগামীর বাংলাদেশ।’
বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামপদ মুস্তফী শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত গণিত দরকার। গণিত যুক্তিবাদী করে, শুদ্ধ ও শাণিত করে, নিজেদের সংশোধন করে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গণিত দরকার। তিনি আরও বলেন, ভীতির কারণে অনেকেই গণিতে ফেল করে। গণিতকে ভয় নয়, জয় করতে হবে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বগুড়া শাখার ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম আলোর সঙ্গে এই গণিত উৎসবের আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্বিত। এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিতের ভীতি দূর করতে পেরেছে। সৃজনশীল বাংলাদেশ গড়তে এ ধরনের আয়োজন অনেকটা সহায়ক হবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আফসানা ইয়াসমিন, বগুড়া বন্ধুসভার উপদেষ্টা সুলতান মাহমুদ খান, বগুড়া বন্ধুসভার সভাপতি চন্দন কুমার রায়, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার পারভেজ প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করে। সকাল সোয়া ১০টা থেকে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে গণিতের পরীক্ষা শুরু হয়। এরপর হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক পর্বের পর ছিল শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব। পাশাপাশি চলে খাতা মূল্যায়নের কাজ।
এবারের উৎসবের মধ্য দিয়ে চলতি বছরের জুলাইয়ে ইংল্যান্ডের বাথ শহরে অনুষ্ঠেয় ৬৫তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ দল নির্বাচন করা হবে। এবার গণিত উৎসবের জন্য সারা দেশ থেকে অনলাইনে প্রায় ৭১ হাজার শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে।
নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রথমে ‘অনলাইন বাছাই অলিম্পিয়াড’ অনুষ্ঠিত হয়। বাছাই অলিম্পিয়াডের বিজয়ীদের নিয়ে এখন ১৮টি শহরে ‘আঞ্চলিক গণিত উৎসব’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আঞ্চলিক গণিত উৎসবের বিজয়ীদের নিয়ে আগামী ১ থেকে ২ মার্চ ঢাকার সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় গণিত উৎসব ২০২৪।